আইএনবি ডেস্ক:সরকারের নানান উদ্যোগের পরও বাজার দাম কমছে না কিছুতেই। সিন্ডিকেটের কারসাজিতে একটার পর একটা পণ্যের দাম বাড়ছে। যদিও পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকার আমদানিকৃত বিভিন্ন পণ্যের শুল্ক প্রত্যাহার করেছে।
ভোক্তা অধিদপ্তর, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং বিভিন্ন জেলাপর্যায়ে গঠিত টাস্কফোর্স কমিটি বাজার মনিটর করছে। এরপরেও কোনো সুফল মিলছে না ভোক্তাদের। দাম বেড়ে আলুর দাম এখন আকাশচুম্বী। বাজারে ৭০ টাকার নিচে আলু মিলছে না। এমনকি অর্ধেক দামে আমদানি করা আলুও কিনতে হচ্ছে দ্বিগুণ দামে। অথচ কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের তথ্য মতে, প্রতি কেজি আলুর উৎপাদন খরচ ১৩ টাকা ৯০ পয়সা। উৎপাদক পর্যায়ে এক কেজি আলু বিক্রি হওয়ার কথা ১৯ টাকা ৪৮ পয়সা। আর পাইকারিতে এক কেজি আলু বিক্রি হওয়ার কথা ২৩ টাকা ৩০ পয়সা। সব ধরনের খরচ মিলে এক কেজি আলুর সর্বোচ্চ দাম হতে পারে ৪৬ টাকা। বাজারের দাম বাড়িয়ে কেজিপ্রতি বাকি ২৪ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে সিন্ডিকেট সদস্যরা।
সরকারের ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ সর্বশেষ তথ্যমতে বাজারে প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ৬৫ থেকে ৭৫ টাকায়। গত সপ্তাহে ছিল ৬৫ থেকে ৭০ টাকা। গত বছর এ সময়ে আলুর দাম ছিল ৪৫ থেকে ৫০ টাকা। কৃষি বিপণন অধিদপ্তর জানায়, ভোক্তা পর্যায়ে আলুর যৌক্তিক দাম ৪৬ টাকা। তাদের মতে বর্তমানে বাজারে প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ৬৮ থেকে ৭০ টাকা। শুল্ক কমানোর আগে এ আলু বিক্রি হয়েছে ৫০ থেকে ৬০ টাকায়। এক মাস আগেও আলু বিক্রি হয়েছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা। আর গত বছরের এ সময় আলুর দাম ছিল ৪৮ থেকে ৫০ টাকা। অর্থাৎ গত বছরের তুলনায় আলুর দাম বেড়েছে ৪০ দশমিক ৮২ শতাংশ। কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট হুমায়ুন কবীর ভূঁইয়া বলেন, অসাধু আলু ব্যবসায়ীরা সারা দেশের মানুষকে জিম্মি করে রেখেছে। অসাধু এসব আলু ব্যবসায়ীদের কারণে আলুর দাম কমছে না। এক্ষেত্রে অনেকখানি দায়ী কোল্ড স্টোরেজ ব্যবসায়ীরা। আলু প্রতি কেজিতে লাভসহ দাম নির্ধারণ করে দিলেও তারা তা মানছে না। ব্যবসায়ীরা আলু পচিয়ে নদীতে ফেলে দেয়। তারপরও বাজারে কম দামে বিক্রি করছে না। তারা মনে করছে ৭০ টাকা আলু বিক্রি করলে দ্বিগুণ লাভ থাকে। সুতরাং কিছু আলু নষ্ট হলেও তাদের লোকসান নাই। এক্ষেত্রে সরকারের সব প্রতিষ্ঠান সহযোগিতা করছে বলে আমরা মনে করি না। প্রত্যেক জেলার ডিসি আছে, এসপি আছে- কোল্ড স্টোরেজে আলু রাখলে, সেখানে ভোক্তা অধিকার ছাড়া অন্য কারও অভিযান করতে দেখা যায় না। মুন্সীগঞ্জে লাখ লাখ বস্তা আলু আছে তারা বিক্রি করছে না। এভাবে তারা সরকারকে ব্ল্যাকমেল করছে। সরকারের সব সংস্থা যদি বাজার মনিটরিং করে তাহলে বাজারে দাম কমতে পারে। গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বর্তমানে খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৭৫ টাকায়। তবে বড় বাজার থেকে পাল্লা (৫ কেজি) হিসাবে কিনলে কিছুটা কমে পাওয়া যায়। ১৫ দিন আগে আলুর কেজি ছিল ৫৫ থেকে ৬০ টাকা।
গত ৫ সেপ্টেম্বর এক প্রজ্ঞাপনে এনবিআর আলু আমদানিতে বিদ্যমান ২৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক কমিয়ে ১৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। একই সঙ্গে আলু আমদানিতে যে ৩ শতাংশ নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক আছে, তা সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করা হয়ছে। আলু আমদানিতে এ শুল্ক সুবিধা বহাল থাকবে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত। এসব সুবিধা নিয়ে টনে টনে আমদানি করা আলু বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকায়। অর্থাৎ আমদানিতে সুফলও পাচ্ছেন না সাধারণ মানুষ। অসাধু ব্যবসায়ীরা কম দামে আমদানি করে বাজারে প্রচলিত দামে বিক্রি করছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, বর্তমানে হিমাগারে থাকা আলুর সরবরাহ শেষের দিকে। পাইকারি বিক্রেতারা চাহিদা অনুসারে আলুর সরবরাহ পাচ্ছেন না। অন্যদিকে এ বছর অক্টোবর মাসে অতিবৃষ্টির কারণে আলুর বীজ রোপণে দেরি করেছেন কৃষকেরা। এতে বাজারে আগাম আলু আসতে দেরি হচ্ছে। এসব কারণে আলুর দাম বাড়ছে।
ক্রেতারা জানান, নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতির বাজারে একসময় আলুই ছিল গরিবের ভরসার জায়গা। তবে সিন্ডিকেট করে আবারও আলুর বাজার অস্থিতিশীল করার চেষ্টা চলছে। ব্যবসায়ীরা কম দামে যেসব আলু আমদানি করে সেসব আলুও বাজারে ৭০ টাকার নিচে মিলছে না। হাজার হাজার টন আলু আমদানি করে তারা বাজারে বেশি দামে বিক্রি করছে। এতে সরকার এবং ভোক্তা প্রতারিত হচ্ছে।
আইএনবি/বিভূঁইয়া