মো: শাহজালাল :
গ্রাহক সেবা সহজতর ও হাতের নাগালে করার অংশ হিসেবে প্রিপেইড মিটার পদ্ধতি চালু করলেও অনেকাংশে তা ভোগান্তি বেড়েছে। প্রিপেইড মিটার রিচার্জের টোকেনের ডিজিট বা সংখ্যা নিয়ে বিভ্রান্তিতে পড়ছে সাধারণ গ্রাহকরা। ডিজিট চাপতে টানা তিনবার ভুল হলে মিটার লক হয়ে যায়। তখন আবার বিদ্যুৎ অফিসে ছোটাছুটির ভোগান্তি পোহাতে হয়। যা নিয়ে অভিযোগের অন্ত নেই।
আবাসিক মিটার রিচার্জ করার ক্ষেত্রে টোকেনে এক লাইনে ২০টি সংখ্যা থাকে, যেটি মিটারে চেপে রিচার্জ করেন গ্রাহকরা। কিন্তু, মূল্য পরিবর্তন হওয়ার সময় এটি বেড়ে ১২টি লাইন হয়, যার প্রতিটি লাইনে ২০টি করে সংখ্যা থাকে। আবাসিক মিটারের ক্ষেত্রে এই ডিজিটের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ২৪০টিতে, যা সাধারণত অন্যান্য সময়ে থাকে ২০টি। বিষয়টিকে রীতিমতো ব্যাপক ভোগান্তির কারণ বলে মনে করছেন পল্লী বিদ্যুতের সাধারণ গ্রাহকরা।
যাত্রবাড়ী এলাকার গ্রাহক রুবিনা আক্তার বলেন, ‘আগে ২০টি ডিজিট চেপে পল্লী বিদ্যুতের প্রিপেইড মিটার রিচার্জ করতে হতো। এমাসে ২৪০টি ডিজিট বা নাম্বার এসেছে। গতকাল (শুক্রবার) মোবাইলের স্ক্রিনে এতগুলো নাম্বার দেখে দেখে প্রেস করতে গিয়ে একবার ভুল হওয়ায়, আবার সব নাম্বার নতুন করে প্রেস করতে হয়েছে, এতো বিশাল ভোগান্তি! আরো দু-একবার ভুল হলে তো মিটার লক হয়ে যেতো, তখন আবার বিদ্যুৎ অফিসে গিয়ে এই লক খুলতে হতো, সেটাই কি ডিজিটাইজেশনের নমুনা!’।
সাভারের দক্ষিণ নামাগেন্ডা এলাকার বাসিন্দা মো. জয়নাল আবেদিন নামের আরেক বলেন, ‘আমার বাড়িতে বিদ্যুতের মিটার সিড়ির নিচে, নিচু হয়ে মিটারে রিচার্জ করতে হয়। এর আগে ২০টি ডিজিট প্রেস করে মিটারে রিচার্জ করতাম, এবার সেখানে ২৪০টি ডিজিট প্রেস করতে হয়েছে। প্রথম দু’বার ভুল হওয়ায় পল্লী বিদ্যুৎ অফিসে ফোন করে জেনে নিয়ে আবারো চেষ্টা করে রিচার্জ করেছি, তা নাহলে আমার মিটারই লক হয়ে যেত। আমার বাড়ির ভাড়াটিয়ারাও একই সমস্যার মুখোমুখি হয়েছে’।
তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আগের দিনে কার্ড স্ক্র্যাচ করে মোবাইলে রিচার্জ করতেও তো এত ডিজিট চাপতে হতো না, এ কেমন ডিজিটাইজেশন?
বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের সিস্টেম অপারেশন পরিদপ্তরের পরিচালক (কারিগরি) মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘যখনই বিদ্যুতের মূল্য পরিবর্তন হয়, তখন মিটারে এই মূল্য পরিবর্তন করতে গিয়ে এই ২৪০টি নাম্বারের টোকেন আসে। নতুন মূল্যে প্রথমবার রিচার্জ করার পর, পরবর্তীতে মূল্য পরিবর্তন না হওয়া পর্যন্ত আর এই সমস্যাটি হয় না’।
দীর্ঘ সাড়ির এই ডিজিট মিটারে চেপে রিচার্জ করতে গিয়ে গ্রাহকের ভোগান্তির বিষয়টি স্বীকার করে এই কর্মকর্তা বলেন, এটি আসলে একটি কারিগরি বিষয়। তবে ধীরে ধীরে আমরা সকল মিটারকে অনলাইনে নিয়ে যাওয়ার কাজ করছি, মিটারগুলো অনলাইন হয়ে গেলে এই সমস্যা আর গ্রাহকদের পোহাতে হবে না।
সম্প্রতি বিদ্যুতের মূল্য পরিবর্তন হওয়াতে গ্রাহকদের এই সমস্যা তৈরি হয়েছে, পরবর্তীতে নতুন করে মূল্য পরিবর্তন না হওয়া পর্যন্ত আর এই সমস্যা থাকবে না।
বর্তমানে সারাদেশে পল্লী বিদ্যুৎ এর প্রায় ৩ কোটি ৪১ লাখ গ্রাহক আছেন বলে জানান এই কর্মকর্তা, যার মধ্যে প্রি-পেইড মিটার ব্যবহার করছেন এমন গ্রাহকের সংখ্যা ১৩ লাখ। এরমধ্যে ৯৮ শতাংশই আবাসিক গ্রাহক।
গ্রাহকদের ভোগান্তির বিষয়টি নিয়ে ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে।
ঢাকা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-৩ এর মহাব্যবস্থাপক মোল্লা মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘যখনই বিদ্যুৎ এর ট্যারিফ(মূল্য) পরিবর্তন হয়, তখনই ট্যারিফ পরিবর্তন করতে গিয়ে এই সমস্যাটি তৈরি হয়। তবে কিভাবে গ্রাহকেরা এই ২৪০টি ডিজিট মিটারে কি-বোর্ডে চেপে মিটার রিচার্জ করবেন সেই পদ্ধতি ইতোমধ্যে আমরা আমাদের ওয়েবসাইটসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ করেছি। এতে সাময়িকভাবে গ্রাহকদের ভোগান্তি হলেও ধীরে ধীরে গ্রাহকরা এর সাথে অভ্যস্ত হয়ে যাবেন’।