আবারও পেঁয়াজের বাজারে আগুন। কোনো কারণ ছাড়াই মাত্র চার থেকে পাঁচ দিনের ব্যবধানে কেজি প্রতি পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ২০-২৫ টাকা। খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, হঠাৎ করে আড়তদাররা পেঁয়াজের দাম বাড়িয়েছে। ফলে তাদের কাছ থেকে বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। তাই বেশি দামে বিক্রি করছি।
আড়তদাররা বলছেন, ভারতে পেঁয়াজের বুকিং রেট বেড়েছে। এ কারণে আমদানি কমিয়ে দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। আর তাতে লাফিয়ে বাড়ছে পেঁয়াজের দাম। নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বমুখী বাজারে পেঁয়াজের দাম বাড়ায় ক্রেতারা নাখোশ।
বুধবার (৬ অক্টোবর) রাজধানীর বাজারে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকা কেজি দরে। তবে আগের কেনা পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬০-৬৫ টাকা কেজি। অথচ গত শুক্রবার (১ অক্টোবর) রাজধানীর বাজারে পেঁয়াজের কেজি ছিল ৪৫-৫০ টাকা কেজি। অর্থাৎ কেজি প্রতি পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ২০-২৫ টাকা। আরও বাড়বে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা। নতুন করে পেঁয়াজের দাম বাড়ায় ক্রেতারা পড়েছেন চরম বিপাকে। পেঁয়াজ কিনতে এসে বিক্রেতাদের সঙ্গে দরকষাকষি করতে হচ্ছে। ক্রেতাদের বিভিন্ন কথায় বিক্রেতারাও বিরক্ত হচ্ছেন।
রাজধানীর মুগদা বাজারের ব্যবসায়ী এনামুল হক পেঁয়াজ বিক্রি করছেন ৬৫ টাকা কেজিতে। তবে কেউ দামদামি করলে ৬০ টাকা কেজি বিক্রি করছেন।
তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। গতকাল কিংবা আজকে যারা পেঁয়াজ কিনেছে (বিক্রেতা) তারা বিক্রি করছে ৭০ টাকা কেজি। আমার পেঁয়াজ কেনা শনিবার, তাই পরিচিত কাস্টমারের কাছে ৬০ টাকায়ও বিক্রি করছি।
একই কথা বলেন খিলগাঁও বাজারের ব্যবসায়ী মনির হোসেন। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, আড়তদাররা পেঁয়াজের দাম বাড়িয়েছে। বলছে আরও বাড়বে।
তিনি বলেন, ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি কমেছে, এই অজুহাতে কৃত্রিম সংকট তৈরি করা হচ্ছে। আর তার প্রভাব পড়েছে খুচরা বাজারে।
রামপুরা কাঁচাবাজারে আসা ক্রেতা মনোয়ার জাহান ঢাকা পোস্টকে বলেন, এক সপ্তাহ আগে ৪০ টাকা কেজি পেঁয়াজ কিনেছি। আজকে কিনতে এসেছি, দাম বলছে ৭০ টাকা। অর্থাৎ অলমোস্ট ডাবল।
তিনি বলেন, কাঁচামরিচের কেজি ২০০ টাকা, ডিমের হালি ৪০ টাকা, চালের দাম বাড়তি। এখন পেঁয়াজের দামও বাড়াচ্ছে। আমরা কই যামু।
কারওয়ান বাজারের পেঁয়াজ ব্যবসায়ী সেলিম হোসেন বলেন, ভারতে অতিবৃষ্টি ও বন্যার কারণে পেঁয়াজের ক্ষেত নষ্ট হয়েছে। এছাড়াও পুজার কারণে বন্দর দিয়ে আমদানি-রফতানি বন্ধ থাকবে। ফলে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে কৃষকরা ক্ষেত থেকে পেঁয়াজ ওঠানো কমিয়ে দিয়েছেন। মোকামগুলোতে লোডিং কমে গেছে।
তবে পুজার পর এমন দাম থাকবে না। ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে নতুন জাতের পেঁয়াজ উঠতে শুরু করেছে। সেগুলো আসতে শুরু করবে। ফলে দাম কমে আসবে বলে প্রত্যাশা তার।
দেশের বৃত্তম পেঁয়াজের পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জেরর ব্যবসায়ী হামিদুল্লাহ মিয়া বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. ইদ্রিস বলেন, বৃষ্টি ও বন্যার কারণে ভারতে প্রচুর পেঁয়াজ নষ্ট হওয়ায় সেখানে বুকিং রেট বেড়ে গেছে। ফলে লোকসানের ভয়ে ব্যবসায়ীরা আমদানি কমিয়ে দিয়েছে। তাই পেঁয়াজের সরবরাহ কমে গেছে। আগে দিনে এক থেকে দেড় হাজার টন পেঁয়াজ বাজারে এলেও এখন আসছে ৬০০-৭০০ টন।
উল্লেখ্য, দেশে প্রতি বছর পেঁয়াজের চাহিদা ৩০ লাখ টন। এর মধ্যে উৎপাদন হয়েছে ২৫ লাখ ৫৭ হাজার টন। তবে নষ্ট হয়ে যাওয়ার সাধরণত উৎপাদিত পেঁয়াজ দাঁড়ায় ১৮ থেকে ১৯ লাখ টনে। বাকি চাহিদা মেটাতে প্রায় ১১ লাখ টন পেঁয়াজ আমদানি করতে হয়। প্রতিবেশী দেশ, সড়ক পথে দ্রুত আনা, কম দাম বিবেচনায় প্রধানত ভারত থেকেই বেশিরভাগ পেঁয়াজ আমদানি করা হয়। ফলে দেশটি থেকে পেঁয়াজ আমদানি কমে গেলেই বাংলাদেশের বাজারে নিত্যপণ্যটির দাম বাড়তে থাকে।