দীর্ঘদিন গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ খেলে বাড়ে মারাত্মক রোগের ঝুঁকি

স্বাস্থ্য ডেস্ক: অম্লের জ্বলাপোড়া, বুক ও পেটব্যথার সঙ্গে প্রায় সব বাঙালিরই বোধ হয় খানিকটা পরিচয় আছে। অম্বলের ব্যথা বাঙালির পুরনো অসুখ। ১৯৮৯ সালে বাজারে আসে এই অ্যাসিড প্রশমনের মোক্ষম ওষুধ। সাধারণভাবে এগুলো গ্যাসের ওষুধ হিসেবে পরিচিত। এই গ্রুপের ওষুধগুলো হলো- ওমিপ্রাজল, প্যান্টোপ্রাজল, ইসোমিপ্রাজল, লানসোপ্রাজল, রেবিপ্রাজল এবং অতি সাম্প্রতিককালের ভনোপ্রাজন। এসব ওষুধ পাকস্থলীর অ্যাসিড প্রশমনে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছে। সঙ্গে নিয়ে এসেছে ভয়ানক বিপদও।

দীর্ঘদিন এ ধরনের ওষুধ সেবন করার কারণে ভিটামিন ঘাটতি, রক্তশূন্যতা, রক্তে ম্যাগনেসিয়ামের ঘাটতি, বিশেষ ধরনের ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, হাড়ক্ষয় এমনকি হাড় ভেঙে যাওয়া, কিডনির রোগ ইত্যাদি হতে পারে। ওষুধটির কারণে পাকস্থলীর অম্লীয় পরিবেশ বদলে যায়। এতে জীবাণুর বংশবিস্তার সহজতর হয়, বিশেষ করে হেলিকোব্যাকটর পাইলোরি নামক এক ধরনের ব্যাকটেরিয়ার জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি হয়। এসব জীবাণু একসময় পাকস্থলী থেকে বসত গড়ে ফুসফুসে। ফলে নিউমোনিয়ার প্রকোপ বেড়ে যায়। গ্যাস্ট্রিন নামক একটি উৎসেচকের পরিমাণ বাড়তে থাকে। এর ফলে ওষুধ ছেড়ে দেওয়ার পরে হঠাৎ করে আবার অ্যাসিডের মাত্রা বেড়ে যায়। দীর্ঘদিন ধরে গ্যাস্ট্রিন নামক এই উৎসেচকের প্রভাবে এক ধরনের কোষ স্ফীত হয়ে যায়। কালক্রমে সেটি ক্যানসারের রূপ নিতে পারে।

এই ওষুধটি সেবনের ফলে অন্ত্রে ক্যালসিয়াম শোষণ ব্যাহত হয়। একটি গবেষণায় দেখা গেছে, দুই সপ্তাহ ওমিপ্রাজল ওষুধ সেবন করলে অন্ত্রে ক্যালসিয়াম শোষণ শতকরা ৪১ ভাগ পর্যন্ত কমে যায়। ফলে হাড়ক্ষয়ের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়। দীর্ঘদিন এমন চলতে থাকলে একসময় হাড় ভেঙে পড়ে।

দীর্ঘদিন এই ওষুধ সেবনের ফলে রক্তে ম্যাগনেসিয়ামের পরিমাণ কমে যায়। এর অভাবে মাংসে কামড়ানো ব্যথা, দুর্বলতা, টিটেনি, খিঁচুনি, রক্তচাপ বৃদ্ধির মতো ঘটনা ঘটে।

ভিটামিন বি-১২ শরীরের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এর অভাবে রক্তশূন্যতা দেখা দেয়, স্নায়ুবৈকল্য সৃষ্টি হয়। দীর্ঘদিন পর্যন্ত অ্যাসিড প্রশমনের ওষুধ সেবনের ফলে এই ভিটামিনের ঘাটতি দেখা দেয়, বিশেষ করে বয়স্কদের এই সমস্যা আরও বেশি হতে পারে। এ ধরনের ওষুধ সেবনের ফলে একুইট ইন্টারেস্টেসিয়াল নেফ্রাইটিস নামক কিডনির মারাত্মক ব্যাধি সৃষ্টি হতে পারে।

এই ওষুধ সেবনের প্রথম থেকে শুরু করে ১৮ মাস সময়ের মধ্যে ব্যাধিটি দানা বাঁধতে পারে। এতে ক্ষুধামন্দা, বমি, জ্বর, প্রস্রাবের সঙ্গে রক্তক্ষরণ পর্যন্ত হতে পারে।

দীর্ঘদিন অ্যাসিড প্রশমনের ওষুধ সেবনের সঙ্গে স্মৃতিভ্রমের যোগসূত্র খুঁজে পেয়েছেন চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা। সুতরাং মুড়ি- মুড়কির মতো ওষুধ সেবনের বাতিক থেকে বেরিয়ে আসতে আমাদের যদি ভালো ও সুস্থ থাকতে চান।

লেখক : লে. কর্নেল ডা. নাসির উদ্দিন আহমদ
মেডিসিন স্পেশালিস্ট
ও এন্ডোক্রাইনোলজিস্ট, সিএমএইচ
চেম্বার : আল-রাজি হাসপাতাল

 

আইএনবি/বিভূঁইয়া