দায়িত্ব গ্রহণের ৬ মাসের মধ্যে হাইতির প্রধানমন্ত্রীকে অপসারণ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: হাইতির প্রধানমন্ত্রী গ্যারি কনিল ক্ষমতা গ্রহণের ছয় মাসেরও কম সময়ের মধ্যে দেশটির শাসক পরিষদ তাকে বরখাস্ত করেছে।

শাসক পরিষদের নয়জন সদস্যের মধ্যে আটজন স্বাক্ষরিত একটি নির্বাহী আদেশে ব্যবসায়ী ও সাবেক হাইতি সিনেট প্রার্থী আলিক্স ডিডিয়ে ফিলস-এমকে গ্যারি কনিলের পরিবর্তে নিয়োগ করা হয়েছে।
খবর বিবিসির।

গ্যারি কনিল জাতিসংঘের একজন সাবেক কর্মকর্তাও ছিলেন। হাইতিতে শত শত গ্যাংয়ের দৌরাত্বে তীব্র নিরাপত্তা সংকটের মধ্যে দেশ পরিচালনায় তিনি নিয়োগ পান। আশা করা হয়েছিল যে, তিনি ২০১৬ সালের পর দেশটির প্রথম প্রেসিডেন্ট নির্বাচন পরিচালনার পথ প্রস্তুত করতে পারবেন।

কনিল তার অপসারণকে অবৈধ বলে অভিহিত করেছেন। শাসক পরিষদে পাঠানো এক চিঠিতে তিনি হাইতির ভবিষ্যত সম্পর্কে ‘গভীর উদ্বেগ’ প্রকাশ করেছেন। চিঠিটি বার্তা সংস্থা রয়টার্স দেখেছে।

হাইতিতে বর্তমানে কোনো প্রেসিডেন্ট বা সংসদ নেই। দেশটির সংবিধান অনুযায়ী, সংসদই একজন প্রধানমন্ত্রীকে অপসারণ করতে পারে।

গ্যারি কনিল গত ৩ জুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছিলেন। তিনি তার চিঠিতে বলেছেন, ‘এই সিদ্ধান্তটি যে কোনো আইনগত ও সাংবিধানিক কাঠামোর বাইরে নেওয়া হয়েছে। যা এর বৈধতা সম্পর্কে গুরুতর উদ্বেগ সৃষ্টি করে।’

হাইতির ভারী অস্ত্রধারী গ্যাংগুলো চলতি বছরের এপ্রিলে কনিলের পূর্বসূরি অ্যারিয়েল হেনরিকে প্রধানমন্ত্রীর পদ ছাড়তে বাধ্য করেছিল। তারা রাজধানী পোর্ট-অ-প্রিন্সের কিছু অংশের দখল করে নিয়েছিল।

অ্যারিয়েল হেনরি গত ২৫ ফেব্রুয়ারি গায়ানায় একটি শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে গেয়েছিলেন। পরবর্তীতে গ্যাং সদস্যরা রাজধানীর বিমানবন্দর দখল করে নিয়েছিল এবং তাকে আর দেশে ফিরতে আসতে দেয়নি। গ্যাংদের চাপের মুখে দেশের বাইরে বসেই পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছিলেন হেনরি।

এরপর হাইতিতে শাসক পরিষদ ট্রানজিশনাল প্রেসিডেন্সিয়াল কাউন্সিল (টিপিসি) গঠিত হয়।

বর্তমানে হাইতি এক ভয়াবহ গ্যাং সংকটের মধ্যে রয়েছে। জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত গ্যাং সংঘাতে ৩ হাজার ৬০০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে এবং ৫ লাখেরও বেশি মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়ে গেছে।

জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, দুই মিলিয়ন হাইতিয়ান জরুরি খাদ্য সংকটে রয়েছে। দেশের অর্ধেক জনগণ যথেষ্ট খাদ্য পাচ্ছে না।

এ পরিস্থিতিতে হাইতির শক্তিশালী গ্যাং নেতা জিমি চেরিজিয়ের বলেছেন, যদি সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো নতুন সরকারের প্রতিষ্ঠার আলোচনা অংশগ্রহণের সুযোগ পায়, তবে তিনি সহিংসতা বন্ধ করতে প্রস্তুত।

আট বছর আগে হাইতিতে সর্বশেষ রাষ্ট্রপতি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সেসময় টেট ক্যালে দলের জোভেনেল মোইস নির্বাচিত হয়েছিলেন।

২০২১ সালের জুলাইয়ে তাকে হত্যার পর থেকে প্রেসিডেন্টের পদটি খালি রয়েছে। গ্যাংগুলো এই ক্ষমতার শূন্যতার সুযোগ নিয়ে দেশটির কিছু অংশ দখল করেছে এবং হাইতি কার্যত আইনের শাসনহীন হয়ে পড়েছে।

গত মাসে জানা গেছে, কেনিয়া থেকে শত শত পুলিশ কর্মকর্তাকে হাইতিতে মোতায়েন করা হয়েছে এবং নভেম্বর মাসে আরও পুলিশ সদস্যদের সেখানে পাঠানো হবে।

আইএনবি/বিভূঁইয়া