আইএনবি নিউজ: কুর্মিটোলায় নিপীড়নের শিকার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীর ডাক্তারি পরীক্ষায় ধর্ষণের আলামত পাওয়ার কথা জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. সোহেল মাহমুদ সোমবার দুপুরে বলেন, মেয়েটির গলা, হাত, গালসহ শরীরের বিভিন্ন অংশে আঘাতের চিহ্ন আছে। “কিছু আঘাত হয়েছে ধর্ষণকারীর দ্বারা, আর কিছু হয়েছে ঘটনাস্থলের কারণে। জঙ্গলের কারণে তার পায়ে কিছু আঘাত হয়েছে। তার গলায় আমরা ধর্ষণকারীর হাতের চিহ্ন পেয়েছি। বোঝা গেছে যে ধর্ষণকারী তার গলা টিপে ধরেছিল। হাতেও একই ধরনের চিহ্ন আছে যেটা থেকে অনুমিত হচ্ছে যে তাকে জোর করে আঘাত করা হয়েছে। লাথি মারা হয়েছে এরকম আঘাতের চিহ্নও পেয়েছি শরীরে।”
ডা. সোহেল মাহমুদ বলেন, “তার শরীরে ধর্ষণের আলামত পেয়েছি। একজন করেছে, না একাধিক ব্যক্তি ছিল- তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়েছে।”
দ্বিতীয় বর্ষের ওই ছাত্রী রোববার সন্ধ্যায় তার বান্ধবীর বাসায় যাওয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে শেওড়ার উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছিলেন। কুর্মিটোলায় বাস থেকে নামার পরপরই তিনি আক্রান্ত হন। রাত পৌনে ১টার দিকে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) ভর্তি করা হয়।
ওই শিক্ষার্থীর বরাত দিয়ে ঢাকা মেডিকেল ফাঁড়ির পরিদর্শক বাচ্চু মিয়া বলেন, রোববার বিকালে ক্লাস শেষে বান্ধবীর বাসায় যাওয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে করে কুর্মিটোলায় নামেন ওই তরুণী। উদ্দেশ্য ছিল রাতে বান্ধবীর বাসায় থেকে পরীক্ষার প্রস্তুতি নেওয়া।
“সন্ধ্যা ৭টার দিকে বাস থেকে নামার পরপরই অজ্ঞাত পরিচয় কোনো লোক তার মুখ চেপে ধরে এবং পাশের একটি নির্জন স্থানে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করে। এক পর্যায়ে তিনি চেতনা হারান।”রাত ১০টার দিকে চেতনা ফিরলে ওই শিক্ষার্থী একটি অটোরিকশা নিয়ে বান্ধবীর বাসায় যান এবং তাকে পুরো ঘটনা বলেন। এরপর সহপাঠীরা তাকে প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে এবং পরে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে যায়।
ওই ছাত্রীর বাবা সোমবার সকালে ক্যান্টনমেন্ট থানায় অজ্ঞাতপরিচয় একজনকে আসামি করে মামলা করেছেন বলে ওসি কাজী শাহান হক জানান।
দুপুরে ঢাকা মেডিকেলের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে মেয়েটির ডাক্তারি পরীক্ষা হয়। ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য চিকিৎসকরা নমুনাও সংগ্রহ করেন। তবে প্রতিবেদন কবে দেওয়া হবে সে বিষয়ে কিছু বলেননি ডা. সোহেল মাহমুদ।
তিনি বলেন, শারীরিকভাবে ওই তরুণী শঙ্কামুক্ত। যেহেতু তার শরীরে বড় ধরনের কোনো আঘাতের চিহ্ন নেই, ফলে দু-একদিনের মধ্যে সুস্থ হয়ে উঠবে।”
ওই শিক্ষার্থীর চিকিৎসায় স্ত্রীরোগ ও প্রসূতিবিদ্যা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সালমা রউফকে প্রধান করে সাত সদস্যের একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে। বোর্ড ইতোমধ্যে তাদের কাজও শুরু করেছে।
বাইরের কেউ এসে যেন ওই শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলতে বা দেখা করতে না পারে, সেজন্য ওসিসির সামনে বাড়তি নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাসির উদ্দিন বলেন, “ওই শিক্ষার্থী স্বাভাবিকভাবেই কিছুটা মানসিক ট্রমায় আছেন। তবে কিছু সময় কাটালে তিনি শারীরিকভাবে সুস্থ হয়ে যাবেন।