গুমে হাসিনার সম্পৃক্ততা ও নির্বাচন নিয়ে যা জানালো যুক্তরাষ্ট্র

আইএনবি ডেস্ক:যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস সম্প্রতি নির্বাচনের সম্ভাব্য যে সময় ঘোষণা করেছেন তাকে স্বাগত জানিয়েছে। এ ছাড়া ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে পালিয়ে যাওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গুমের সঙ্গে সম্পৃক্ততা তদন্তেও সমর্থন জানিয়েছে তারা। গতকাল বুধবার স্টেট ডিপার্টমেন্টের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন উপ-মুখপাত্র ভেদান্ত প্যাটেল।

ড. ইউনূস ঘোষিত নির্বাচনের সময় উল্লেখ করে এক সাংবাদিক জানতে চান, বাংলাদেশ সরকার ঘোষণা দিয়েছে- ২০২৫ সালের শেষে অথবা ২০২৬ সালের শুরুর দিকে নির্বাচন হতে পারে।

এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান কী?
জবাবে প্যাটেল বলেন, নির্বাচনের প্রস্তুতির জন্য বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের গৃহীত পদক্ষেপগুলোকে স্বাগত জানাই। কেননা শেষ পর্যন্ত তারা বাংলাদেশের জনগণকে ইচ্ছামতো প্রতিনিধি বাছাইয়ের সুযোগ দেবে। নির্বাচন এমন একটি বিষয়, যে ক্ষেত্রে আমরা সময়টাকে পর্যবেক্ষণ করছি। অবশ্যই আমরা এই পুরো প্রক্রিয়া চলাকালীন আইনের শাসন এবং গণতান্ত্রিক নীতির প্রতি সম্মানকে উৎসাহিত করতে চাই যেন পরিবর্তন ফলপ্রসূ হয়।

পুরো বিশ্বেই শান্তিপূর্ণ উপায়ে অবাধ এবং সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের পক্ষে যুক্তরাষ্ট্র।

গুম তদন্ত কমিশনে শেখ হাসিনার সম্পৃক্ততা নিয়ে ওই সাংবাদিক জানতে চান, দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস বাংলাদেশের গুম তদন্ত কমিশনের একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, যা বলপূর্বক গুমের বিষয়গুলো তদন্ত করছে। কমিশনের রিপোর্টে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর সম্পৃক্ততা উঠে আসছে। যুক্তরাষ্ট্র এর আগে জোরপূর্বক গুমের ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল।

এই বিষয়ে আপনার কোনো মন্তব্য আছে?
জবাবে প্যাটেল বলেন, গত দুই দশকে শত শত বাংলাদেশিকে জোরপূর্বক গুম করা হয়েছে এমন প্রতিবেদনে আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। জোরপূর্বক গুম গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন। কেননা অনির্দিষ্ট কালের জন্য আটক বা নিখোঁজ রাখলে ভুক্তভোগীরা মানসিক যন্ত্রণায় ভোগেন। তাদের পরিবারও মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার এসব অপরাধ তদন্তে যে পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে, আমরা তাকে স্বাগত জানাই।

ভুক্তভোগী এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে ন্যায্য ও স্বচ্ছ প্রক্রিয়া বাস্তবায়নের আহ্বান জানাই।
অন্য আরেক সাংবাদিক ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বাংলাদেশ ইস্যুতে কথা হয়েছে কি না জানতে চেয়েছেন। তিনি জানতে চান, নভেম্বরের শেষের দিকে ইতালিতে জি৭-এর সম্মেলনের সময় অ্যান্টনি ব্লিনকেন এবং ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শ্রী জয়শঙ্করের মধ্যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। তাদের আলোচনার মৌলিক বিষয় কী ছিল? এ ছাড়া বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর হামলার বিষয়ে তারা কথা বলেছে কি না?

জবাবে স্টেট ডিপার্টমেন্টের উপমুখপাত্র বলেন, ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আমাদের ঘনিষ্ঠ অংশীদারত্ব রয়েছে। তাদের সঙ্গে আমাদের নিরাপত্তা সমস্যা, বাণিজ্য সমস্যা, কনস্যুলার সমস্যা এবং ভিসাসহ নানা ইস্যুতে কথা হয়েছে। আমরা জয়শঙ্করের সঙ্গে সেই বৈঠকের বিষয়টি পাঠ করেছি। তিনি আরো বলেন, ভারতের সঙ্গে প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে মূল অংশীদার ছিল বাইডেন প্রশাসন।

দ্বিতীয় আরেক প্রশ্নে বাংলাদেশে কথিত ‘হিন্দু নির্যাতন’ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে ওয়াশিংটন ডিসির সামনে কয়েক হাজার মার্কিন হিন্দুর বিক্ষোভের বিষয়টি উল্লেখ করে ওই সাংবাদিক বলেন, কেন আমি বাংলাদেশ ইস্যুটি নিয়ে এসেছি, কারণ হাজার হাজার হিন্দু বাংলাদেশের হিন্দুদের সমর্থনে ওয়াশিংটন ডিসিসহ যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ করছেন। গত সপ্তাহেও বিক্ষোভ হয়েছে। ভারত এবং বাংলাদেশেও হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রেও অনেক বাংলাদেশি এই বিক্ষোভে অংশ নিয়েছে। তারা ব্লিনকেনকে এ বিষয়ে হস্তক্ষেপের অনুরোধ জানাচ্ছে। কেননা তিনি ভারতে খুব বিখ্যাত। একই সময়ে বিক্ষোভকারীরা অনুরোধ জানাচ্ছে- আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত বা জাতিসংঘে যেন যুক্তরাষ্ট্র হস্তক্ষেপ করে এবং অপরাধীদের বিচারের আওতায় নিয়ে আসে। যারা যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভর করছে তাদের জন্য কি আপনাদের কোনো বার্তা আছে?

জবাবে প্যাটেল বলেন, ওই অঞ্চল আমাদের জন্য অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমে আমরা নিশ্চিত করতে চাই যে যুক্তরাষ্ট্রের বিক্ষোভগুলো শান্তিপূর্ণভাবে হচ্ছে। কেননা বিক্ষোভ সব মানুষের মৌলিক অধিকার। আমরা সারা বিশ্বে আমাদের অংশীদারদের সঙ্গে মানবাধিকারের বিষয়ে জোর দিতে থাকব। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গেও এ বিষয়ে জোর দিয়ে যাব।

 

আইএনবি/বিভূঁইয়া