চোখ উঠলে করণীয়

স্বাস্থ্য ডেস্ক: গতকাল ২৫ সেপ্টেম্বর বিশ্বজুড়ে পালিত হলো বিশ্ব রেটিনা দিবস। আপনি শুনে অবাক হবেন, বিশ্বের ১০০ মিলিয়নের বেশি মানুষের রেটিনা রোগ রয়েছে। এটি অন্ধত্বের অন্যতম প্রধান কারণ। রেটিনা হলো চোখের অতিপাতলা একটি স্তর, যা সবকিছু সুন্দরভাবে দেখতে সহায়তা করে। এটি কোনো কারণে রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়লে সুস্পষ্টভাবে আমাদের সবকিছু দেখায় বিঘ্ন ঘটে। এজন্য রেটিনার যত্ন নিতে হবে। চিকিৎসকের কাছে গিয়ে নিয়মিত চোখ পরীক্ষা করে নিশ্চিত হতে হবে যে, সব ঠিকঠাক রয়েছে। তবে চোখের রেটিনা সুস্থ রাখতে ধূমপান ও মদ্যপান থেকে বিরত থাকতে হবে। ইলেকট্রিক ডিভাইসগুলো ব্যবহারের সময় সতর্ক থাকতে হবে। কারণ এ ডিভাইস থেকে নীল আলো নির্গত হয়, যা দৃষ্টিশক্তির জন্য ক্ষতিকর। চোখে আরও নানা ধরনের রোগ হয়। এসবের মধ্যে চোখ ওঠা একটি। সম্প্রতি চোখ ওঠা রোগীর সংখ্যা বেড়ে গেছে। এ রোগে অনেকের একসঙ্গে চোখ লাল হতে দেখা যায়। যেমন- পরিবারের একজনের চোখ লাল এবং কয়দিন পর দ্বিতীয় বা তৃতীয় জনের চোখ লাল। আবার স্কুলের কারও একজনের হলো। তার সঙ্গে বা পর পরই অন্য জনের চোখ লাল। সাধারণত ঠাণ্ডাজনিত ভাইরাসের কারণে চোখ ওঠার সমস্যাটি দেখা যায়। ভাইরাসের মধ্যে এডিনো ভাইরাস সবচেয়ে ছোঁয়াচে। এটি এক ধরনের রেসপাইরেটরি ভাইরাস। ফলে সাধারণ সর্দি-জ্বরে এ রোগের প্রকোপ বেশি পরিলক্ষিত হয়। বছরের কোনো কোনো সময় এ রোগের প্রাদুর্ভাব বেড়ে যায়। ইদানীং ঢাকা শহরে এ রোগের প্রাদুর্ভাব ক্রমে বেড়ে যাচ্ছে।

উপসর্গ :
প্রায়ই দুচোখ লাল হয়। তবে এক চোখেও হতে পারে। চোখে পুঁজের মতো জমা হয়। ঘুম থেকে উঠলে অনেক সময় চোখের পাতা লেগে থাকতে দেখা যায়। চোখ দিয়ে পানি ঝরে। চোখ জ্বালাপোড়া করে। চোখে খচখচ ভাব; হালকা ব্যথা ও ফটোফোবিয়া বা রোদে তাকাতে অসুবিধা হয়ে থাকে।

 

চিকিৎসা :
চোখ ওঠা বা কনজাংটিভাইটিস সাধারণত ১ থেকে ৩ সপ্তাহ সময়ে সেরে যায়। ঠাণ্ডা বা সর্দির মতো উপসর্গ থাকলে কেবল অ্যান্টিহিস্টামিন সেবনই যথেষ্ট। বাজারে প্রচলিত কোনো একটি অ্যান্টিবায়োটিক ড্রপ ডোজ মেনে ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ ছাড়া চোখে ওষুধ ব্যবহার না করাই উত্তম।

 

চোখ ওঠার পর সতর্কতা :
চোখে পিচুটি জমলে হালকা নরম পরিষ্কার কোনো কাপড় দিয়ে বা পানির ঝাপটা দিয়ে চোখ পরিষ্কার করা যেতে পারে। তবে কোনোভাবেই চোখ রগড়ানো যাবে না। কালো চশমা রোদ বা আলোয় কিছুটা স্বস্তিদায়ক। কোনো কোনো চোখ ওঠা বেশ ছোঁয়াচে হয়। বিশেষ করে এডিনো ভাইরাসজনিত চোখ ওঠা। এক্ষেত্রে বিশেষ সাবধানতা অবলম্বন প্রয়োজন। যেমন- চোখে হাত দেওয়া যাবে না। একজনের ব্যবহার করা রুমাল, গামছা বা কাপড়-চোপড় অন্য কেউ ব্যবহার করা যাবে না। হাত সবসময় সাবান বা স্যানিটাইজার দিয়ে ধুয়ে পরিষ্কার রাখতে হবে। জনসমাগম, অনুষ্ঠান, ক্লাস ইত্যাদি পরিহার করে চলা ভালো। এ সময় অনেক শিশুর ক্লাস পরীক্ষা চলছে। চোখ ওঠা নিয়ে ক্লাসে উপস্থিত না হওয়া ভালো। কারণ রোগটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। পরীক্ষা থাকলে উল্লিখিত নিয়ম মেনে চলতে হবে। অবশ্যই কালো চশমা পরে থাকতে হবে। মেলামেশা করা যাবে না। খাতা, পেনসিল শেয়ার করা যাবে না। সংস্পর্শ যত এড়িয়ে চলা যাবে, ততই নিরাপদ। সুযোগ থাকলে সবার থেকে আলাদা বা দূরত্বে বসে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করা যেতে পারে। এ অবস্থায় কোনোভাবেই কন্টাক্ট লেন্স ব্যবহার করা যাবে না।

লেখক : চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞ ও সার্জন

প্রাক্তন সহযোগী অধ্যাপক, জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান প্রতিষ্ঠান ও হাসপাতাল, শেরেবাংলা নগর, ঢাকা
কনসালট্যান্ট, আইডিয়াল আই কেয়ার সেন্টার, আদাবর, ঢাকা।

আইএনবি/বিভূঁইয়া