স্বাস্থ্য ডেস্ক: অনেকটাই পরিবারের ওপর নির্ভর করে একজন মানুষের সুস্বাস্থ্য । পরিবারের প্রত্যেক সদস্যের খাবারের রুচি এবং ধরণ আলাদা হয়ে থাকে। কেউ অতিরিক্ত মিষ্টি, লবণ, তেল বা চর্বি জাতীয় খাবার বেশি পছন্দ করে। আবার অনেকে স্বাস্থ্যের কথা চিন্তা করে অতিরিক্ত মিষ্টি, লবণ, তেল বা চর্বি জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলেন। যখন একেকজনের পছন্দ একেক রকম হয় তখন রান্নার ধরণেও পরিবর্তন আসে। অনেকেরই ইচ্ছে থাকার পরও তখন ডায়েট ফলো করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। ফলাফল- স্বাস্থ্যের অবনতি!
স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস তখনই মেনে চলা সম্ভব যখন পরিবারের সকলের সহযোগিতা পাওয়া যায় এবং সকলেই স্বাস্থ্য সচেতন হয়। তাই শুধু নিজে সচেতন হলে চলবে না, পাশাপাশি পরিবারের অন্য সদস্যদের মাঝেও সচেতনতা বৃদ্ধির চেষ্টা করতে হবে।
পরিবারের ছোট সদস্যরা কিন্তু বড়দের অনুকরণ করে। তারা কেমন পরিবেশে বড় হচ্ছে, কেমন খাবার খাচ্ছে, কীভাবে পরিবারের অন্য সদস্যরা জীবনযাপন করছে, এ সব কিছুর ওপরই নির্ভর করে আপনার সন্তানের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য।
সুস্বাস্থ্য ও পরিবারের সদস্যদের ভূমিকা আসলে কীভাবে সম্পর্কিত? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গেলে বেশকিছু বিষয় সামনে আসে। যেমন-
১. পুষ্টি বিষয়ক জ্ঞান: বাবা- মা যখন পুষ্টির গুরুত্ব সম্পর্কে জানবেন তখন তারা অবশ্যই তার সন্তানকে বা পরিবারের অন্য সদস্যদের সে বিষয়ে জানানোর চেষ্টা করবেন। বাজার থেকে শুরু করে রান্নার উপাদান, রান্নার প্রক্রিয়া, খাবারের সময় এবং পরিমাণ সবকিছুতেই একটা শৃঙ্খলা বজায় থাকে। মনে রাখবেন পুষ্টি জ্ঞানই আপনাকে শেখাবে বাজার থেকে আপনি কোন খাবারটি আপনার পরিবারের জন্য নিয়ে আসবেন।
২.স্বাস্থ্যকর অভ্যাসকে সমর্থন: পরিবারের সদস্যদের সকল রকম ভালো অভ্যাসকে সমর্থন করতে হবে। পরিবারের সমর্থন না থাকলে অনেকক্ষেত্রে তা সুস্বাস্থ্যের অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়। হেলদি লাইফস্টাইল (স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন) নিয়ে যাদের আগ্রহ বা যারা তা অনুসরণ করতে চান, সমর্থন না পেলে একসময় তিনি আগ্রহ হারিয়ে ফেলবেন। তাই পরিবারের ভূমিকা এখানে মুখ্য।
৩. বাবা- মা হবেন সন্তানের জন্য আদর্শ: সন্তানের প্রথম শিক্ষক তার বাবা-মা। ছোট্ট একটি অভিজ্ঞতার কথা বলি। একদিন ভোরে হাঁটতে গিয়ে দেখি ৭/৮ বছরের একটি ছেলে তার বাবা-মার সাথে হাঁটতে বের হয়েছে। তার বাবার মতো সেও জগিংয়ের পোশাক পরে হাঁটতে এসেছে। দারুণ লাগছিল!
এভাবে যদি প্রত্যেক পরিবার তার সন্তানদের মধ্যে স্বাস্থ্যকর জীবন ব্যবস্থার শিক্ষা দিতে পারেন তাহলে ভবিষ্যত প্রজন্মের স্বাস্থ্য ঝুঁকি অনেকটাই কমানো সম্ভব।
৪. পারিবারিক খাবারে অভ্যস্ত করা: বাইরের খাবারের প্রতি আসক্তি যত কমবে, স্বাস্থ্যঝুঁকিও তত কমবে। মনে রাখবেন- চোখের আড়াল তো মনের আড়াল’।
খাবারে একঘেয়েমি ভাব দূর করতে কিছু বিষয়ের প্রতি লক্ষ্য রাখা প্রয়োজন। খাবারে ভিন্নতা, নতুন নতুন রেসিপি এবং খাবারকে আকর্ষণীয় করে উপস্থাপন করার চেষ্টা করতে হবে, যেন বাইরের খাবারের মোহ কমে যায়। বাচ্চারা যখন ঘরের খাবারে ভিন্নতা পাবে তখন বাইরের খাবারের প্রতি আসক্তি কমে যাবে। তবে অবশ্যই খাবারের পুষ্টিগুণ এখানে বিবেচ্য।
৫. মেনু নির্বাচন: সপ্তাহের সাতদিনের মেনু নির্ধারিত থাকলে সুষম খাবার গ্রহণ সহজ হয়ে যায়। যেমনঃ সপ্তাহে অন্তত ২ দিন সামুদ্রিক মাছ খাওয়ার পরিকল্পনা থাকা। এভাবে পুষ্টিগুণ বিবেচনা করে বিভিন্ন ধরনের খাবার খাদ্য তালিকায় অর্ন্তভুক্ত করতে হবে।
সঠিক খাবার এবং শরীর চর্চা অনেক জটিল রোগের প্রকোপ কমাতে পারে। সকলের সম্মিলিত প্রয়াস একটি সুস্থ জীবন যাপনের জন্য একান্ত প্রয়োজন।
আইএনবি/বিভূঁইয়া