আইএনবি ডেস্ক: বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটেও শক্তিশালী অবস্থান ধরে রেখেছে মার্কিন মুদ্রা ডলার। দর হারাচ্ছে ইউরো, পাউন্ড, জাপানি ইয়েনসহ অন্যান্য মুদ্রা। ভারতীয় মুদ্রা রুপি, বাংলাদেশি মুদ্রা টাকারও দর পতন হয়েছে। শুক্রবার যুক্তরাজ্য ৫০ বছরের মধ্যে সব চেয়ে বেশি ট্যাক্স কমানোর ঘোষণা দেওয়ার পরই পাউন্ডের দাম রেকর্ড কমে গেছে। এর ফলে যুক্তরাজ্যে তেল-গ্যাসসহ আমদানি করা অনেক পণ্যের দাম বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ডলারের বিপরীতে ইউরোর দামও ২০ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে রয়েছে। মার্কিন ডলারের তুলনায় ভারতের রুপির দাম রেকর্ড পরিমাণ কমে ৮১ টাকা ২৩ রুপিতে দাঁড়িয়েছে।
ব্রিটিশ মুদ্রার ইতিহাসে সর্বনিম্ন দর রেকর্ড হয়েছিল ১৯৮৫ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি। সেদিন পাউন্ডের দর দাঁড়িয়েছিল ১ দশমিক ০৪২ ডলার। তবে গত শুক্রবার ব্রিটিশ অর্থমন্ত্রী কর ছাড় ঘোষণার দুই দিন যেতে না যেতেই রেকর্ড সর্বনিম্ন দামের কাছাকাছি দরপতন হয়েছে পাউন্ডের। গতকাল ১ পাউন্ডের দর দাড়ায় ১ দশমিক ০৩ ডলারে। মাত্র দুই দিন আগেও ছিল ১ দশমিক ০৭ ডলারে। দরপতনের কারণ ব্যাখ্যা করে বিশ্লেষকরা বলছেন, ব্রিটেনে এখন ৪০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতি মোকাবিলা করছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক নীতি সুদ হার বাড়িয়েছে কিন্তু সরকার ট্যাক্স কমানোর ঘোষণা দেওয়ার ফলে তাদের বাজেট ঘাটতি বেড়ে যাবে এবং সরকারি ঋণও বেড়ে যাবে। ইতিমধ্যে দেশটিতে মন্দার আশঙ্কাও করা হয়েছে। সব মিলিয়ে দেশটিতে অর্থনৈতিক সংকট ঘনীভূত হচ্ছে। এর প্রভাব মুদ্রা বাজারেও পড়েছে। মার্কিন বিশ্লেষকদের মতে, যুক্তরাজ্যের পরিবর্তিত আর্থিক অবস্থান ব্রিটিশ পাউন্ডকে আরও দুর্বল করে তুলতে পারে।
২০ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন ইউরো :ইউরোপীয় ইউনিয়নের অভিন্ন মুদ্রা ইউরোর দরেও বড় পতন হয়েছে। গত ২০ বছরের মধ্যে ডলারের বিপরীতে ইউরোর দাম এখন সর্বনিম্ন পর্যায়ে লক্ষ্য করা গেছে। গতকাল ১ ইউরোর দাম দশমিক ৯৭ ডলারে নেমেছে। ২০০৮ সালে এক ইউরো কিনতে খরচ হতো ১ ডলার ৬০ সেন্ট। বর্তমানে ইউরোর দর ডলারের প্রায় সমান হয়ে গেছে। ১৯৯৯ সালে ইউরো চালু হওয়ার পর ডলারের বিপরীতে এতটা পতন হয়নি মুদ্রাটি।
দর হারিয়েছে জাপানি ইয়েন: বিশ্বের অন্যান্য মুদ্রার বিপরীতে জাপানি ইয়েনেরও দরপতন লক্ষ্য করা গেছে। গতকাল ১ ডলার ১৪৫ ইয়েনে লেনদেন হতে দেখা যায়। যা মাত্র দুই দিন আগেও ১৪৩ ইয়েন ছিল। জাপানের নীতিনির্ধারণী সুদহার এখনো মাইনাস দশমিক শূন্য ১ শতাংশ। দেশটির ১০ বছর মেয়াদি বন্ডের সুদহার শূন্য থেকে মাইনাস শূন্য দশমিক ২৫ শতাংশের মধ্যে আটকে রেখেছে। বর্তমান অর্থনৈতিক সংকটে যখন বিশ্বের বড় অর্থনীতির দেশগুলো নীতিনির্ধারণী সুদহার বাড়িয়ে যাচ্ছে তখন জাপান সুদহার আটকে রেখেছে।
রুপির রেকর্ড পতন :গতকাল সোমবার প্রতি ডলারের বিপরীতে ৮১ দশমিক ৪৭ রুপি লেনদেন হয়েছে। যা এখনো পর্যন্ত সর্বনিম্ন। শুক্রবারও ডলারের বিপরীতে ৮০ দশমিক ৯৯ রুপি দর ছিল। অর্থাৎ ভারতীয় মুদ্রার বিপরীতে ডলারের দাম আরও বাড়ছে। এর প্রভাব পড়েছে ভারতের শেয়ারবাজারেও। গতকাল ভারতের শেয়ারবাজারে বড় পতন লক্ষ্য করা গেছে।
টাকার অবস্থান :বাংলাদেশি মুদ্রা টাকার অবমূল্যায়ন হচ্ছে গত বছরের আগস্ট মাস থেকেই। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী গতকাল ডলারের দাম ১০৩ টাকা ৫০ পয়সা রয়েছে। তবে খোলাবাজারে ডলার আরও বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। গত বছরের আগস্টের আগে ১ ডলার কিনতে ব্যয় হতো ৮৪ টাকা ৮০ পয়সা। বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলসহ নিত্যপণ্যের দাম বাড়তে থাকায় এরপর হুহু করে বাড়তে থাকে ডলারের দাম। একপর্যায়ে ডলারের দাম ১২০ টাকায়ও উঠে যায়।ইত্তেফাক
আইএনবি/বিভূঁইয়া