স্বাস্থ্য ডেস্ক: প্রচন্ড গরমে ফ্রিজের এক গ্লাস ঠাণ্ডা পানি স্বর্গীয় প্রশান্তি দেয় বটে, কিন্তু তা শরীরে বাড়িয়ে দেয় পানির চাহিদা। হঠাৎ করে অতিরিক্ত ঠাণ্ডা পানি পান করার ফলে রক্তনালিগুলো সংকুচিত হয়ে পড়ে। এ ছাড়া ঠাণ্ডা লেগে যাওয়ার প্রবল আশঙ্কা থাকে। শ্বাসনালিতে শ্লেষ্মার একটা অতিরিক্ত আস্তরণ তৈরি হয়। ফলে শ্বাসযন্ত্রে বিভিন্ন সংক্রমণের আশঙ্কা তৈরি হয়।
স্বাভাবিক অবস্থায় পানিতে বিভিন্ন ধরনের খনিজ উপাদান থাকে, যা আমাদের শরীরের গঠন এবং সার্বিক কর্মদক্ষতার জন্য খুবই উপকারী। ফ্রিজের ঠাণ্ডা পানিতে সেই সব খনিজ উপাদানের কার্যকারিতা কমে যায়। ফলে পানি থেকে পাওয়া খনিজের চাহিদা অপূর্ণই থেকে যায়।
ঠাণ্ডা পানি পান করার কারণে পেট, মাথা, রক্ত, জরায়ুসহ হৃৎপিণ্ডের অনেক ক্ষতি হয়, যা ধীরে ধীরে শরীরে বিভিন্ন জটিলতা তৈরি করে। শরীরের তাপমাত্রা ৯৮ ডিগ্রি ফারেনহাইট। অতিরিক্ত ঠাণ্ডা পানি পান করার কারণে দেহের তাপমাত্রা তখন আর ৯৮ ডিগ্রি ফারেনহাইটে থাকে না। তখন শরীরের ভেতরে অতি শীতলতার সৃষ্টি হয়, যা বিভিন্ন ধরনের সমস্যা তৈরি করে। সেগুলোর মধ্যে আছে:
পানির সঠিক চাহিদা পূরণ না হওয়া
ঠাণ্ডা পানিতে তৃষ্ণা মেটে খুব দ্রুত। ফলে শীতলতার কারণে পানির চাহিদা কম অনুভূত হয়। মনে হয় পানি পানের আর প্রয়োজন নেই। অথচ শরীরের প্রয়োজনীয় পানির চাহিদা মেটে না। পানির এই ঘাটতি থেকে পানিশূন্যতা তৈরি হয়, যা শরীরের অন্যান্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
টনসিলের সমস্যা
ঠাণ্ডা পানি পান দ্রুত যে সমস্যা সৃষ্টি করে, তা হলো টনসিল ফুলে যাওয়া। ঠাণ্ডা পানি পানে সহজে ঠাণ্ডা লাগার আশঙ্কা থাকে। ফলে টনসিল ফুলে গিয়ে ক্ষতের সৃষ্টি করতে পারে। পাশাপাশি জ্বর, কাশি ও শরীরে ব্যথা হতে পারে।
মাইগ্রেনের সমস্যা
মাইগ্রেনের ব্যথা বাড়িয়ে তোলার জন্য ঠাণ্ডা পানি পান একটি বড় অনুঘটক। অতিরিক্ত ঠাণ্ডা পানি পান করার জন্য মাথাব্যথা শুরু হতে পারে।
খাদ্যনালির সমস্যা
ঠাণ্ডা পানি পান করার সঙ্গে সঙ্গে খাদ্যনালি সংকুচিত হয়ে যায়। এর কারণে খাবার খেতে সমস্যা হতে পারে। এতে হজমজনিত সমস্যা ছাড়াও গলায় মারাত্মক প্রভাব পড়তে পারে। গলায়ও ক্ষত সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়। পরে যা গলায় বা খাদ্যনালিতে ঘায়ের কারণ হয়ে যেতে পারে।
হৃৎপিণ্ডের সমস্যা
ঠাণ্ডা পানি পানের কারণে বড় ক্ষতি হয় হৃৎপিণ্ডের। গরম থেকে এসেই ঠাণ্ডা পানি পান করলে শরীরের শিরা-ধমনি সংকুচিত হয়ে যায়। ফলে স্বাভাবিক রক্তসঞ্চালন ব্যাহত হয়ে হৃৎপিণ্ডের ওপর বাড়তি চাপ পড়ে। বাড়তি চাপ সামাল দিতে হৃৎপিণ্ডের কম্পন বা হার্ট বিট বেড়ে যায়, যাকে বলে পালপিটেশন।
জ্বর হওয়া
শরীরের স্বাভাবিক তাপমাত্রা ৯৮ ডিগ্রি ফারেনহাইট। কিন্তু ঠাণ্ডা পানি পান করলে রক্ত হঠাৎ করেই শীতল হয়ে যায়। ফলে কিছু অঙ্গ শরীরে ভেতরের তাপমাত্রা স্বাভাবিক করতে প্রচুর তাপ বা হিট উৎপন্ন করে, যা পরবর্তী সময়ে জ্বরের কারণ হয়।
দাঁতের ক্ষতি
ঠাণ্ডা পানি দাঁতের এনামেলের মারাত্মক ক্ষতি করে। অতিরিক্ত ঠাণ্ডা পানির সংস্পর্শে আসামাত্রই দাঁতের বহিরাবরণ সংকুচিত হয়ে এনামেলে ফাটল ধরে। মাড়ি ক্ষয়ের জন্যও ঠাণ্ডা পানি বেশ দায়ী।
গর্ভবতীদের ঝুঁকি গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত ঠান্ডা পানি
পান করলে গর্ভপাতের ঝুঁকি তৈরি হতে পারে। ঠাণ্ডা পানি জরায়ুর সংকোচনের মাধ্যমে গর্ভপাতের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।
মনে রাখা ভালো, ফ্রিজের ঠাণ্ডা পানি নীরবে শরীরের দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি ও পানির ঘাটতি তৈরি করে। তাই স্বাভাবিক বা কুসুম গরম পানি শরীরের জন্য উপযুক্ত ও গ্রহণযোগ্য।
আইএনবি/বিভূঁইয়া