খালি পেটে লিচু খাওয়া যাবে কিনা জেনে নিন

স্বাস্থ্য ডেস্ক: রসালো ও সুস্বাদু এই ফলটি দেখতে যতটা সুন্দর, উপকারীও বটে। লিচু বেশ পুষ্টিকর ও মজাদার ফল। এটি মৌসুমী ফল হিসেবে বেশ জনপ্রিয়।

তবে ভারত ও বাংলাদেশে কিছু এলাকায় শিশুর মৃত্যুর কারণ হিসাবে লিচু থেকে বিষক্রিয়ার প্রমাণ পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। তারা বলছেন, ভারতের বিহার রাজ্য এবং বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে অনেক শিশুর মৃত্যুর কারণ লিচু। তাই বলে, লিচু খাওয়া নিষেধ নয়। তবে খালি পেটে অনেক লিচু খাওয়া ঠিক নয়। বিশেষ করে শিশুদের। কারণ শিশুদের দেহের বিপাকক্রিয়া পরিপক্ব নয়।

ঠিক কতটি লিচু খেলে এই বিষক্রিয়া হবে, তা এখনো জানা নেই। তবে চিকিৎসকেরা বলছেন, ভরা পেটে বা খাবার গ্রহণের পর একসঙ্গে ৫–৭টি লিচু খাওয়া নিরাপদ। তবে কাঁচা বা আধ পাকা লিচু গাছ থেকে পেড়ে খাওয়া উচিত নয়।

খেয়াল রাখতে হবে শিশুরা যেন লিচুর খোসা মুখে পুরে না চোষে। কেননা, এতে অনেক সময় কীটনাশক বা বাদুড়ের লালা লেগে থাকতে পারে। শিশুদের খোসা ছাড়িয়ে বাটিতে পরিমিত লিচু পরিবেশন করুন।

খালি পেটে লিচু ক্ষতিকারক হলেও, ভরা পেটে লিচু খেলে কোনো সমস্যাই হয় না। তাই ভরা পেটে পাকা লিচু খেতেই পারেন। এতে কোন সমস্যা হবে না। তবে লিচু রোজ খুব বেশি না খাওয়াই ভালো। পরিমিত খেলে কিছু হয় না।

কিছু গবেষণায় লিচু খাওয়ার কারণে মস্তিষ্কে প্রদাহ হওয়ার মতো ঘটনা উঠে এসেছে। একিউট এনকেফালাইটিস সিনড্রম নামে এই জটিল সমস্যার একটি কারণ হতে পারে লিচু টক্সিসিটি বা একিউট হাইপোগ্লাইসেমিক টক্সিক এনকেফালোপ্যাথি। কিন্তু তাই বলে লিচু খেলেই শিশুরা এই গুরুতর রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যাবে, তা নয়। গুজব, বিভ্রান্তি আর ভুল ধারণার বদলে বিজ্ঞানসম্মত ব্যাখ্যা ও সমাধান জানাটা জরুরি।

লিচুতে কিছু টক্সিন সত্যিই থাকে, যেমন হাইপোগ্লাইসন এ, এমসিপিজি ইত্যাদি। এরা আমাদের যকৃতে গ্লুকোজ উৎপাদন ও চর্বি ভাঙতে বাধা দেয়। শিশুরা যদি রাতে না খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ে বা অনেকক্ষণ না খেয়ে থেকে খালি পেটে হঠাৎ অনেকগুলো লিচু খায় তবে বিপত্তি হতে পারে। বিশেষ করে যেসব শিশু খুব হালকা–পাতলা ও অপুষ্টির শিকার এবং ২ থেকে ১০ বছর বয়সী—তাদেরই ঝুঁকি বেশি। এই রাসায়নিকগুলোর প্রভাবে শিশুর শরীরে হঠাৎ করে গ্লুকোজের অভাব দেখা দেয়। এই টক্সিনগুলো মস্তিষ্কে চলে যায়। মেটাবলিক এসিডোসিস দেখা দেয়। ফলে মাথাব্যথা, বমি, ঘাম, খিঁচুনি, অচেতন হয়ে পড়তে পারে। আধা পাকা ও কাঁচা লিচুতে এই সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা বেশি।

শিশু যদি আক্রান্ত হয়, দ্রুত হাসপাতালে স্থানান্তর করুন। দ্রুত গ্লুকোজ প্রতিস্থাপন, খিঁচুনি নিয়ন্ত্রণ, শরীরে লবণ–পানির ভারসাম্য রক্ষা এবং রক্তের পিএইচ মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করতে হবে। অন্য কোনো রোগ বা বিষক্রিয়া আছে কি না, তা–ও খতিয়ে দেখতে হবে।

আইএনবি/বিভূঁইয়া