এক যুগ পর সমুদ্রে তেল-গ্যাস উত্তোলনে উদ্যোগ !

আসাদুজ্জামান আজম :

ভারত-মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্রসীমা বিজয়ের ১ যুগ পর সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। দেরিতে হলেও উদ্যোগের ফলে সামুদ্রিক সম্পদ ব্যবহারে মনোযোগি হওয়াকে সাধুবাদ জানিয়েছে সংশ্লিষ্টরা। হালনাগাদ করা নতুন উৎপাদন-অংশীদারি চুক্তি বা পিএসসি অনুসারে গভীর এবং অগভীর সমুদ্রের ২৪টি ব্লকে আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করেছে পেট্রোবাংলা। যদিও এরই মধ্যে মার্কিন দুটি বড় কোম্পানিসহ বিশ্বের খ্যাতনামা প্রতিষ্ঠানগুলো আগ্রহ দেখিয়েছে বঙ্গোপসাগরের খনিজ সম্পদ উত্তোলনে।

বিশ্লেষকরা বলছেন,  আন্তর্জাতিক আদালতে দীর্ঘ আইনি লড়াই শেষে ভারত-মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্রসীমা বিজয়ের পর যুগ পেরিয়েছে বাংলাদেশ। তবে বঙ্গোপসাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে উল্লেখযোগ্য কোনো অগ্রগতির পথে এগোতে পারেনি পেট্রোবাংলা তথা জ্বালানি বিভাগ। দেরিতে হলেও এ উদ্যোগ বাংলাদেশকে খনিজ সম্পদে নতুন মাইলফলক আনবে।

এর আগে সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে সবশেষ দরপত্র ডাকা হয়েছিল ২০১৬ সালে। কাজও শুরু করেছিল বিদেশি চারটি কোম্পানি। তবে কখনো গ্যাসের মূল্য আবার কখনও প্রাপ্যতার ইস্যু ধরে মাঝপথেই বঙ্গোপসাগর ছেড়ে যায় তিনটি প্রতিষ্ঠান।

অবশেষে অচলায়তন ভেঙে এবার মাঠে নেমেছে পেট্রোবাংলা। গেল বছরে চূড়ান্ত করা উৎপাদন-অংশীদারি চুক্তি বা নতুন পিএসসির আলোকে ১০ মার্চ আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করেছে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানটি। আগ্রহী প্রতিষ্ঠানগুলোকে সময় দেয়া হয়েছে ৬ মাস।

মূলত বঙ্গোপসাগরে প্রাকৃতিক গ্যাসের মজুতকে মোট ২৬টি ব্লকে ভাগ করা আছে। এর মধ্যে ১৫টি ব্লক গভীর সমুদ্রে আর ১১টি ব্লককে ধরা হয় অগভীর হিসেবে। এরমধ্যে দুইটি অগভীর ব্লকে জরিপ চালাচ্ছে ভারতীয় প্রতিষ্ঠান ওএনজিসি।

জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. বদরুল ইমামের মতে, সমুদ্রবক্ষের গ্যাসে পুরো পরিস্থিতি বদলে দেয়া সম্ভব। তিনি বলেন, বাংলাদেশের অনাবিষ্কৃত জায়গায় এমনও হতে পারে যে সেখানে বিশাল সম্পদ লুকিয়ে আছে। কিন্তু সেখানে কাজ না করলে তো বুঝার উপায় নেই। তাই খনন করতে হবে। আর খনন করে বিশাল সম্পদ আবিষ্কার করা গেলে তো চিত্র পাল্টে যাবে। বিশাল, মাঝারি বা ছোট আকারে হলেও সম্পদের দেখা মিলবেই!

তবে বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোর অতি আগ্রহের মধ্যেও তাদের কারিগরি ও প্রকৌশলগত সব দিক যাচাই-বাছাই করেই কাজ দেয়ার আহ্বান তার।

অধ্যাপক ড. বদরুল ইমাম বলেন, শেভরন ও অ্যাকশন মোবিলের মতো কোম্পানি বাংলাদেশে থাকাটা ইতিবাচক দিক। তবে অনেক ছোটখাট কোম্পানি আছে, যারা হয়ত একটা ব্লক নেবে, কিন্তু এক থেকে দুই বছর পর তারা অন্য কোম্পানির কাছে বিক্রি করে দিয়ে চলে যাবে। কিন্ত আমরা সেটা চাই না।

এদিকে গভীর বঙ্গোপসাগরে নিজ সীমানায় অনুসন্ধান চালিয়ে এরই মধ্যে বড় সাফল্য পেয়েছে দুই প্রতিবেশী দেশ ভারত ও মিয়ানমার। অন্ধ্রপ্রদেশের উপকূল থেকে ৩৫ কিলোমিটার দূরত্বে জ্বালানি তেল ও গ্যাসের বড় মজুত পেয়েছে ওএনজিসি। আর বাংলাদেশের সীমানার নিকটবর্তী এলাকার মিয়া ও শোয়ে নামে দুটি গ্যাসকূপ থেকে এরই মধ্যে গ্যাস উত্তোলন শুরু করেছে মিয়ানমার।

এএ/বি.