নিজস্ব প্রতিবেদক
আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে শরীয়তপুরের ডামু্ড্যা পৌরসভা নির্বাচন। আজ ১২ ফেব্রুয়ারি (শুক্রবার) রাত ১২টার পর প্রচার-প্রচারণা শেষ হবে। প্রতীক পাওয়ার পর থেকে ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে নানা ধরণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন প্রার্থীরা। তবে পৌরসভার বিদ্রোহী ও বিএনপি মেয়র প্রার্থীরা নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ করেছেন।
এবার এ পৌরসভায় ৪ মেয়র প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। তারা হলেন, আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী (নৌকা প্রতীক) মাস্টার কামাল উদ্দিন আহমেদ, আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী (জগ প্রতীক) মো. রেজাউল করিম (রাজা) ছৈয়াল, বিএনপি মনোনীত (ধানের শীষ প্রতীক) মেয়র প্রার্থী নাজমুল হক সবুজ মিয়া এবং বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী (মোবাইল ফোন প্রতীক) পৌর বিএনপির সভাপতি মো. আলমগীর হোসেন মাদবর।
প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থীদের মধ্যে আওয়ামী লীগ সমর্থিতরা উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষাসহ নতুন নতুন উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। অত্যাধুনিক নাগরিকসেবা সম্পন্ন ডিজিটাল পৌরসভা গঠনের অঙ্গীকার রয়েছে তাদের। এছাড়াও পৌরসভার পানীয় জল, ড্রেনেজ ব্যবস্থা ও রাস্তাঘাটের উন্নয়নসহ দুর্নীতিমুক্ত আধুনিক ও জবাবদিহিমূলক পৌরসভা গঠনের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন বিএনপি, বিএনপির বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী
আর আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী।
সরেজমিনে জানা যায়, ডামুড্যা পৌরসভায় মূলত আওয়ামী লীগ ও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থীর মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। নৌকার প্রার্থী
মাস্টার কামাল উদ্দিন আহমেদ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি। দলের ২ মনোনয়ন প্রত্যাশীর মধ্যে তিনি নৌকার মাঝি হয়েছেন। স্থানীয় সংসদ সদস্য নাহিম রাজ্জাকের আশির্বাদও রয়েছে তার উপর। উপজেলা আওয়ামী লীগসহ উপজেলা নেতৃবৃন্দ এ পৌরসভা নির্বাচনে নৌকার পক্ষে মিটিং, মিছিল, মোটরসাইকেল শোভাযাত্রসহ সভায় অংশ নিয়ে ভোট প্রার্থনা করছেন।
আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী মাস্টার কামাল উদ্দিন আহমেদ জানান, পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডে নৌকার ব্যাপক জোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। আগামি ১৪ ফেব্রুয়ারি ভোটাররা তাকে নির্বাচিত করবেন। তিনি নির্বাচিত হলে পৌরবাসীর কল্যাণ এবং শান্তির জন্য সন্ত্রাস, চাঁদাবাজ, মাদকমুক্ত ও পরিকল্পিত পৌরসভা প্রতিষ্ঠা করবেন।
আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী মেয়র প্রার্থী মো. রেজাউল করিম (রাজা) ছৈয়াল জানান, তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ায় তাকে আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
এই পৌরসভায় তিনি সাবেক মেয়র। তিনি অতি যত্নে পৌরবাসীর সেবা করেছেন। তাদের দুঃখ-দুর্দশায় পাশে দাঁড়িয়েছেন। অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণ হলে তিনি আবারও বিপুল ভোটে নির্বাচিত হবেন।
তার অভিযোগ, নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণায় আওয়ামীলীগ প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকরা উগ্রতা ও ক্ষমতার দাপট দেখাচ্ছেন। প্রচারণায় বাঁধা দিচ্ছেন, মাইক ভাংচুর করছে, পোস্টার পুড়ে ও ছিঁড়ে ফেলছে, মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছেন। প্রতীক বরাদ্দের পর থেকে একের পর এক মামলা দিয়ে কর্মীশূণ্য করা হচ্ছে। জগ প্রতীকের সম্ভাব্য পোলিং এজেন্টদের মামলায় আসামী করা হচ্ছে।
অভিযোগ দিলেও রিটার্নিং অফিসার কোন ব্যবস্থা নিচ্ছেননা। এতে নির্বাচনে ভোটগ্রহণ সুষ্ঠু হবে এমনটা আশা করা বাতুলতা মাত্র। তবুও নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াবেন না বলেও জানান তিনি।
অপর দিকে বিএনপি মেয়র নাজমুল হক সবুজ মিয়া জানান, তিনি জেলা বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদক। তার সমর্থকদের হুমকি দিচ্ছে নৌকার মেয়র প্রার্থীর লোকজন। তাদের ঢাকা চলে যেতে বলছে।
তিনি বলেন, ভোটগ্রহণ সুষ্ঠু হলে তাকে পরাজিত করার শক্তি আওয়ামী লীগ ও বিএনপি প্রার্থীর নেই। সততা ও ন্যায়-নীতির কারণে ভোটাররা তাকে বিপুল ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী করবেন।
এদিকে ডামুড্যা পৌরসভা নির্বাচনে স্থানীয় সাংসদ নাহিম রাজ্জাকের বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে। লিখিত অভিযোগে বলা হয়, নির্বাচনের শুরু থেকে ডামুড্যা পৌরশহরের বিভিন্নস্থানে নৌকার প্রার্থী কামাল উদ্দিনের পক্ষে প্রচার প্রচারণা চালাচ্ছেন। একই সঙ্গে সভা সমাবেশ করছেন তিনি। প্রতিপক্ষের প্রার্থী ও সমর্থকদের বিরুদ্ধে উস্কানিমূলক বক্তব্য দিচ্ছেন তিনি। ওই সাংসদের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেছেন বিএনপি মেয়র প্রার্থী নাজমুল হক সবুজ মিয়া ও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী মেয়র প্রার্থী মো. রেজাউল করিম (রাজা) ছৈয়াল।
ডামুড্যা উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা এইচএম গোলাম মোস্তফা জানান, নির্বাচনী প্রচারণায় বাঁধা বিষয়ে বিএনপি প্রার্থীর পক্ষ থেকে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছেন। অন্যদিকে বিদ্রোহী মেয়র প্রার্থী জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটার্নিং কর্মকর্তা বরাবর অভিযোগ করেছন।
তিনি জানান, নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। আগামি ১৪ ফেব্রুয়ারি এ পৌরসভায় সকলের সহযোগিতায় সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন সম্পন্ন হবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।
চতুর্থ ধাপে অনুষ্ঠেয় পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে ৪ জন, সংরক্ষিত ওয়ার্ডে নারী কাউন্সিলর পদে ৯ জন ও সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৩০জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
এ পৌরসভার ৯টি কেন্দ্রে মোট ১২ হাজার ২৫৯জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। এর মধ্যে মহিলা ভোটার ৬ হাজার ২৯৯ জন আর পুরুষ ৫ হাজার ৯৬০ জন।