আন্তর্জাতিক ডেস্ক: যুক্তরাষ্ট্রের ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ও বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস গাজা যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি স্পষ্ট করে বলেছেন, যুদ্ধ শেষ হলেও ফিলিস্তিনের উপত্যকাটি ইসরায়েলের দখলে থাকা উচিত নয়। ফিলাডেলফিয়ায় অনুষ্ঠিত ন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অব ব্ল্যাক জার্নালিস্টসের (এনএবিজে) সঙ্গে আলাপচারিতায় কমলা এ বক্তব্য দেন।
সেখানে তিনি ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে একটি স্থায়ী যুদ্ধবিরতি চুক্তির ওপর জোর দেন এবং ফিলিস্তিনিদের স্বাধীনতার বিষয়টি গুরুত্বসহকারে তুলে ধরেন।
কমলা হ্যারিস আরও বলেন, ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংকট সমাধানের জন্য দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধানই একমাত্র পথ হতে পারে। মধ্যপ্রাচ্যে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে হবে এমনভাবে যেন ইরানের মতো দেশগুলোর প্রভাব বিস্তারের সুযোগ না পায়। তার মতে, এই অঞ্চলে টেকসই শান্তির জন্য একটি সুষম এবং নিরপেক্ষ সমঝোতা প্রয়োজন।
গাজা যুদ্ধের ভয়াবহতা ও কমলার প্রতিক্রিয়া : গাজা যুদ্ধের বিষয়ে আফ্রিকান-আমেরিকান সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে কমলা বলেন, এ অঞ্চলের সবার জন্য একটি শান্তিচুক্তি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গাজা যুদ্ধ প্রায় এক বছর ধরে চলছে, যেখানে হাজারো মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ইসরায়েলের হামলায় এখন পর্যন্ত ৪১ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, আর আহত হয়েছেন প্রায় ১ লাখ মানুষ। অন্যদিকে ইসরায়েল দাবি করেছে, হামাসের হামলায় তাদের প্রায় ১২০০ মানুষ প্রাণ হারিয়েছে এবং আরও ২৫০ জনকে গাজায় অপহরণ করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। গাজা যুদ্ধ ছাড়াও ওহাইও অঙ্গরাজ্যের স্প্রিংফিল্ড নিয়ে কমলাকে প্রশ্ন করা হয়। সম্প্রতি সেখানে ডানপন্থিরা মিথ্যা দাবি ছড়িয়েছে যে, হাইতি থেকে আসা অভিবাসীরা পোষা প্রাণী খেয়ে ফেলছে।
এ প্রসঙ্গে কমলা বলেন, এ ধরনের বিভ্রান্তিমূলক তথ্য ক্ষতিকর এবং ঘৃণ্য। আমরা এমন বিভেদমূলক প্রচারণা কখনোই মেনে নিতে পারি না। ৪৫ মিনিটের এই সাক্ষাৎকারের শুরুতে কমলা হ্যারিস অর্থনীতির বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। তিনি বলেন, প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হলে আবাসন সংকট সমাধানে বেসরকারি বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে কাজ করবেন। এ ছাড়া, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে আরও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া উচিত ছিল বলে স্বীকার করেন তিনি।
মোদির সঙ্গে বৈঠক আগামী সপ্তাহে : সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট এবং রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী ট্রাম্প জানিয়েছেন, আগামী সপ্তাহে তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠক করবেন। প্রধানমন্ত্রী মোদি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সফরে যাচ্ছেন। তিনি কয়েকটি সরকারি অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন। মিশিগানে প্রচারের সময় মঙ্গলবার ট্রাম্প বলেছেন, ‘বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ভারত বড় অপব্যবহারকারী।’ তার পরই তিনি বলেন, ‘তবে মোদি অসাধারণ।’ ট্রাম্প জানান, ‘মোদি আগামী সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রে আসছেন। তখন তার সঙ্গে বৈঠক হবে। তবে এই বিষয়ে তিনি আর বিস্তারিত কিছু বলেননি।
কোয়াড নেতাদের বৈঠক : মার্কিন প্রেসিডেন্ট আগামী ২১ সেপ্টেম্বর কোয়াড নেতাদের শীর্ষ বৈঠকের আয়োজন করেছেন। সেখানে নরেন্দ্র মোদি এবং অস্ট্রেলিয়া ও জাপানের প্রধানমন্ত্রী থাকবেন। মোদি নিউইয়র্কে কিছু সরকারি অনুষ্ঠানেও যোগ দেবেন। গত কয়েক মাসে যেসব রাষ্ট্রনেতা যুক্তরাষ্ট্র সফরে গেছেন, তারা ট্রাম্পের সঙ্গেও দেখা করেছেন। আগামী নভেম্বরে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে কমলা হ্যারিস বনাম ট্রাম্প লড়াই হবে।
ট্রাম্প-মোদি সম্পর্ক : ট্রাম্প যখন প্রেসিডেন্ট ছিলেন, তখন তার সঙ্গে নরেন্দ্র মোদির উষ্ণ সম্পর্ক ছিল। ২০১৯ সালে মোদি যখন যুক্তরাষ্ট্র সফরে যান, তখন ট্রাম্প টেক্সাসে তার জন্য বিশেষ ইভেন্টের আয়োজন করেছিলেন। সেখানে ৫০ হাজার মানুষ যোগ দিয়েছিলেন। আবার ২০২০ সালে ট্রাম্পের সফরের সময় মোদি আমেদাবাদে নমস্তে ট্রাম্প-এর আয়োজন করেন। প্রবীণ সাংবাদিক জয়ন্ত রায় চৌধুরী ডিডব্লিউকে বলেছেন, ‘ট্রাম্প এই ধরনের কথা আগেও বলেছেন। বাণিজ্য নিয়ে ভারতের সমালোচনা তিনি আগে করেছেন এবং তার পাশাপাশি মোদির ঢালাও প্রশংসা করেছেন।’ জয়ন্ত মনে করেন, ‘ট্রাম্প একদিকে ব্যবসায়ীদের সন্তুষ্ট করার জন্য ভারতের বাণিজ্যিক কড়াকড়ির নিন্দা করেছেন, অন্যদিকে ভারতীয় মূলের নাগরিক ও মোদির অনুগামীদের ভোট পাওয়ার চেষ্টাও করেছেন।’ইত্তেফাক
আইএনবি/বিভূঁইয়া