নড়িয়া (শরীয়তপুর) প্রতিনিধি: শরীয়তপুর জেলার নড়িয়া উপজেলার ভোজেশ্বর ইউনিয়নে মিন্টু ছৈয়াল (৩৩) বাহিনীর অত্যাচারের আতঙ্কে প্রায় ১ বছর যাবত ওই ইউনিয়নের চান্দনী গ্রামের ২৫টি পরিবার ঘরবাড়ি ছেড়ে অন্যত্র বসবাস সহ পালিয়ে বেড়াচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এতে করে পাশাপাশি পরিবারগুলোর ছেলে-মেয়েদের লেখাপাড়া ব্যাহত হচ্ছে। অভিযুক্ত মিন্টু ছৈয়াল একই গ্রামের মৃত ইয়াকুব ছৈয়ালের ছেলে। এ ব্যাপারে ভুক্তভোগী পরিবারগুলো শরীয়তপুরের পুলিশ সুপার সহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেছে।
গ্রামবাসী ও ভুক্তভোগী পরিবারগুলো জানায়, নড়িয়া উপজেলায় ভোজেশ্বর ইউনিয়নের চান্দনী গ্রামের আরশেদ আলী ছৈয়ালের ছেলে ইয়াকুব ছৈয়াল (৫৫) গত ২০১৯ সালের ১০ জুন সকাল পৌনে ৯টার দিকে মোটরসাইকেল নিয়ে নিজ বাড়ি থেকে কলাবাগান যাচ্ছিলো। পথে চান্দনীর আবু সিদ্দিক ঢালীর বাড়ির সামনের পাকা সড়কে পৌঁছালে দুর্বৃত্তরা তার ওপর বোমা নিক্ষেপ করে ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে। গুরুতর আহত অবস্থায় স্থানীয়রা ইয়াকুবকে উদ্ধার করে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে অবস্থার অবনতি দেখে কর্তব্যরত চিকিৎসক উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকা প্রেরণ করে। ঢাকা নেয়ার পথে ইয়াকুব মারা যায়। এ ঘটনায় ভোজেশ্বর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক আলী আহম্মদ শিকদারকে প্রধান আসামি ও তার পরিবারের ১৪ জনসহ ২২ জনকে আসামি করে গত ১১ জুন নড়িয়া থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। মামলার বাদী ইয়াকুব ছৈয়ালের ছেলে মিন্টু ছৈয়াল (৩৩)। এদিকে, ইয়াকুব হত্যার পর তার ছেলে মিন্টু ছৈয়ালের নেতৃত্বে স্থানীয় প্রভাবশালী কিছু রাজনৈতিক নেতা ও জনপ্রতিনিধিদের ছত্রছায়ায় স্থানীয় জুয়েল খান, আউয়াল মুন্সী, রিয়াজুল ছৈয়াল, শহিদুল ছৈয়াল, রুবেল মুন্সী, মোহাম্মদ আলী ছৈয়াল, নজু ছৈয়াল, রাব্বি বেপারী, চান্দু শেখ, ইছাহাক ছৈয়াল সহ ৩০/৪০ নিয়ে বাহিনী গঠন করে। ওই বাহিনীর আতঙ্কে প্রায় ১ বছর যাবত চান্দনী গ্রামের ২৫টি পরিবার ঘরবাড়ি ছেড়ে অন্যত্র বসবাস সহ পালিয়ে বেড়াচ্ছে। আর হত্যা মামলার সাথে জড়িত নয় এমন অনেক নিরীহ লোকজনের ওপর হামলা, বাড়িঘর লুটপাট ও মারধরসহ নানান মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের হুমকি দিচ্ছে ওই মিন্টু বাহিনী। স্থানীয় সূত্র আরও জানায়, নানা ধরনের অপকর্মের জন্য স্বঘোষিত “মিন্টু বাহিনী” গঠন করেছেন মিন্টু ছৈয়াল। ওই বাহিনীর বিভিন্ন অপকর্মে কেউ বাঁধা দিলে কিংবা পুলিশকে জানালে নেমে আসে নির্যাতন। মিন্টু বাহিনীর আতঙ্কে চান্দনী গ্রামের আলী আহম্মেদ খান, অলিম উদ্দিন ঢালী, খলিল ঢালী, জলিল ঢালী, লাল মিয়া ঢালী, মতলেব ঢালী, কাদের ঢালী, জামাল ঢালী, জাকির ঢালী, আবুল বাসার ঢালী, আলী আকবর ঢালী, মাওলানা আব্দুল মালেক, হাফেজ সানাউল্লাহ, আবুল কাশেম ঢালী, রফিক উদ্দিন ঢালী, আলী আজম ঢালী, জহির উদ্দিন ঢালী, নজরুল সহ ২৫টি পরিবারের প্রায় ২০০ জন মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে অন্যত্র বসবাস সহ পালিয়ে বেড়াচ্ছে। মিন্টু বাহিনীর আতঙ্কে ভুক্ত পরিবারগুলোর ছেলে-মেয়েদের লেখাপাড়া ব্যাহতসহ প্রবাসে থাকা স্বজনরাও বাড়িতে আসতে পারেনি। এ নিয়ে চরম আতঙ্কে রয়েছে এলাকাবাসী।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ভুক্তভোগী পরিবারের কয়েকজন শিক্ষার্থী ও অভিভাবক বলেন, মিন্টু বাহিনীর ভয়ে দীর্ঘদিন যাবত বিভিন্ন স্থানে বসবাস করায় পড়াশুনা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ভুক্তভোগী কয়েকজন বলেন, আমাদের এলাকায় একটি হত্যার ঘটনা ঘটে। কে বা কারা হত্যা করেছে তাও জানি না। আমরা ওই হত্যা মামলার আসামিও না। কিন্তু ঘটনার পর মিন্টু ছৈয়াল বাহিনীর নানান অত্যাচারে গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছি। অন্যত্র আত্মীয়-স্বজন ও বাসা ভাড়া নিয়ে থাকছি। এভাবে আর কতদিন; আমরা জীবনের নিরাপত্তা চাই, বাঁচতে চাই। এ ব্যাপারে পুলিশ প্রশাসন সহ যথাযথ কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করছি। গ্রামবাসীরা জানান, হামলা, লুটপাট, মাদক ও বিভিন্ন অপকর্ম করে মিন্টু ছৈয়াল বাহিনী। তাদের ভয়ে কেউ কোনো কথা বলে না। তাদের ভয়ে নিরীহ লোকগুলো বাড়ি ছাড়া। দেশের এই চরম মূহুর্ত করোনার মধ্যেও অসহায় লোকগুলো কর্মহীন হয়ে বিভিন্ন স্থানে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। তাই মিন্টু ছৈয়াল বাহিনীতে আইনের আওতায় দাবি জানাচ্ছি। এতে এলাকায় শান্তি আসবে।
এব্যাপারে ভোজেশ্বর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক আলী আহম্মদ শিকদারের ছেলে এবং নড়িয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারন সম্পাদক শহিদুল ইসলাম শিকদার বলেন, ২০১৯ সালের ১০ জুন চান্দনী গ্রামে একটি সংঘর্ষ হয়। সেই সংঘর্ষে ইয়াকুব ছৈয়াল নামে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়। সেই ঘটনায় আমিসহ আমাদের পরিবারের ১৪ জনসহ ২২জনকে আসামি করে একটি মিথ্যা মামলা হয়। সেই মিথ্যা মামলায় পাঁচ মাস জেল খেটেছি। মামলার আসামি সবাই জামিনে আছি। সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করে চান্দনী গ্রামের নিরীহ ২৫টি পরিবারকে গ্রাম ছাড়া করেছে মিন্টু ও তার বাহিনী। যারা মামলার আসামি নয়। এমনকি দেশের এই দূর্যোগে অসহায় মানুষগুলো ওই বাহিনীর ভয়ে গ্রামে ফিরতে পারছে না পরিবারগুলো। গ্রাম পরিবারগুলো যাতে বাড়ি ফিরতে পারে তার ব্যবস্থা করার জন্য পুলিশকে অনুরোধ করেছি। তিনি আরও বলেন, মিন্টু ছৈয়াল তার বাহিনীর লোকজন নিয়ে মাদক সেবন ও বিক্রি করে। সাবেক মেম্বার সোরাফ হোসেন মাদকের বিরুদে প্রতিবাদ করায় তাকে মারধরও করেছে। এ ঘটনায় থানায় একটি অভিযোগও হয়েছিল।
এব্যাপারে মিন্টু ছৈয়ালের বক্ত্যবের জন্য বার বার চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। নড়িয়া থানার ওসি মো. হাফিজুর রহমান বলেন, খবর নিচ্ছি। ঘটনার সত্যতা পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।