আইএনবি ডেস্ক: সার্বিক সহযোগীতা নিয়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে আগামীর দিকে এগিয়ে যেতে চায় বিএনপি। এ লক্ষ্যে জাতীয় নির্বাচন পর্যন্ত সরকারের সঙ্গে যেন কোনো ধরনের দূরত্ব সৃষ্টি না হয় সেদিকে সজাগ থাকবে দলটি।
তবে সঠিক সময়ে ভোট না হলে নির্বাচনের দাবি নিয়ে রাজপথে নেমে সরকারের ওপর চাপ তৈরি করতেও পিছপা হবেনা তারা। সে উদ্দেশ্য নিয়ে আগামী ৭ নভেম্বর জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবসের দিন থেকেই নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামবে দলটি। যাতে আন্দোলনের ফসল অন্তর্বর্তী সরকারকে কেউ যাতে ব্যর্থ করতে না পারে।
সংবাদমাধ্যম অনুযায়ী, ঢাকা মহানগরসহ তৃণমূলকে শক্তিশালী করতে সাংগঠনিক পুনর্গঠন কার্যক্রম পরিচালনা ও জেলা-মহানগর, থানা-উপজেলা-পৌর শাখার মেয়াদোত্তীর্ণ ও নিষ্ক্রিয় কমিটি ভেঙে সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন কমিটি গঠনেরও সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি।
দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে ইতোমধ্যে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা মেয়াদোত্তীর্ণ ও নিষ্ক্রিয় কমিটির তথ্য সংগ্রহ শুরু করেছেন। নির্দেশনা অনুযায়ী নতুন কমিটিতে বিগত আন্দোলন-সংগ্রামে মাঠে ছিলেন-এমন ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাদের মূল্যায়ন করতে বলা হয়েছে।
এ সম্পর্কে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘আমরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে নির্বাচনের জন্য যৌক্তিক সময় দিতে চাই। আমরা আশা করি, সরকার এ সময়কে সঠিকভাবে কাজে লাগিয়ে সংস্কার কাজ শেষ করে দ্রুত নির্বাচন দেবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পুনর্গঠন একটি চলমান প্রক্রিয়া; সে অনুযায়ী কাজ চলছে।’
এছাড়া বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী সাইয়েদুল আলম বাবুল বলেন, ‘সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড সবসময়ই চলছে। চলমান প্রক্রিয়ার অংশ হিসাবে মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি বা যেসব কমিটির কর্মকাণ্ড সন্তোষজনক নয়-কোনোটা পুনর্গঠন আবার মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি ভেঙে দিয়ে নতুন করে কমিটি গঠন করার বিষয়ে নির্দেশনা রয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, বিগত আন্দোলন-সংগ্রামে ত্যাগী নেতাকর্মী যারা রাজপথে ছিলেন, তাদের মূল্যায়ন করে কমিটি করতে হবে।
এটি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশ। ত্যাগীদের মূল্যায়ন করতে হবে। সংগঠনকে আরও শক্তিশালী করার জন্য যত দ্রুত সম্ভব সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি করার জন্য ব্যবস্থা নিচ্ছি। এ কার্যক্রম ইতোমধ্যে শুরুও করেছি। ’
দীর্ঘ ১৭ বছর পর মুক্ত রাজনৈতিক পরিবেশ পেয়েছে বিএনপি। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে দলকে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করতে চায় শীর্ষ নেতৃত্ব। এ লক্ষ্যে মেয়াদোত্তীর্ণ সাংগঠনিক জেলা কমিটি ভেঙে নতুন নেতৃত্ব গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
যেসব কমিটির শীর্ষ নেতৃত্বের বিরুদ্ধে বিগত আন্দোলনে নিষ্ক্রিয়তা, সাংগঠনিক অদক্ষতা ও বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের প্রমাণ পেয়েছে; সেসব কমিটি ভেঙে দেওয়া হবে। ইতোমধ্যে তিনটি জেলা কমিটি বিলুপ্ত করা হয়েছে।
নেতারা বলছেন, বিএনপির সুদিনের সম্ভাবনায় এখন অনেক হাইব্রিড নেতা জুটতে শুরু করেছেন। আওয়ামী লীগের অনেক সুবিধাভোগী খোলস পরিবর্তন করে বিএনপির রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হতে চাচ্ছেন।
এ বিষয়ে বিএনপির পক্ষ থেকে কঠোর নির্দেশনা থাকলেও বিভিন্ন কায়দাকানুন করে দলের দায়িত্বশীল নেতাদের সঙ্গে সখ্য গড়ে আখের গোছানোর চেষ্টা করছেন বলে তারা জানতে পারছেন। আবার বিগত দিনে আন্দোলন-সংগ্রামে মাঠে ছিলেন না, অনেকে বিদেশে ছিলেন-পট পরিবর্তনের পর তারাও এখন নানা জায়গায় প্রভাব খাটাচ্ছেন। যে কারণে অনেকটা কোণঠাসা বিএনপির ত্যাগীরা।
দায়িত্বশীল নেতারা জানান, আন্দোলন-সংগ্রামে থাকা ত্যাগীদের মূল্যায়ন করতেই তারা কাজ করছেন।
জানা যায়, সম্প্রতি সাংগঠনিক এক বৈঠকে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের মেয়াদোত্তীর্ণ ও নিষ্ক্রিয় জেলা-মহানগর, থানা-উপজেলা ও পৌর কমিটির তথ্য নিতে নির্দেশ দিয়েছেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। একই সঙ্গে এসব কমিটি কাউন্সিলের মাধ্যমে গঠন করতে বলেছেন। ত্যাগীদের দিয়ে নতুন কমিটি করার বিষয়েও বিশেষ নির্দেশনা দেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।
এদিকে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি কর্মসূচি দিয়ে মাঠে থাকারও সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। একই সঙ্গে গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠায় ছাত্র-জনতার সফল গণ-অভ্যুত্থানে ভূমিকা রাখা সব শক্তির ঐক্য ধরে রাখার চেষ্টা অব্যাহত রাখবে দলটি।
দলীয় সূত্র জানায়, এবারের ৭ নভেম্বর ‘জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস’ জাঁকজমকভাবে পালন করবে বিএনপি। এ উপলক্ষ্যে ইতোমধ্যে ১০ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে দলটি। এর মধ্যে ৮ নভেম্বর ঢাকায় বড় আকারে র্যালি করবে। ৭ নভেম্বরকেন্দ্রিক কর্মসূচির পর কর্মসূচির গতি বাড়ানো হবে। জেলা ও মহানগরে সমাবেশ করারও পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
জানা যায়, সোমবারের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে রাষ্ট্র মেরামতে ঘোষিত সংস্কার কর্মসূচি এবং দ্রুত সময়ের মধ্যে নির্বাচন দাবির বিষয়ে আলোচনা করেন নেতারা। তারা ৫ আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানের পর রাষ্ট্রে নতুন করে কোনো ধরনের সংকট বা জটিলতায় পড়ুক-এমন পরিস্থিতি সতর্কভাবে এড়িয়ে চলার অবস্থান প্রকাশ করেন।
বিএনপি নেতাদের মতে, ড. মুহাম্মদ ইউনূস নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারকে সব ধরনের সহযোগিতা করছে দল, যা ভবিষ্যতেও করবে। কিন্তু আওয়ামী লীগ ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকাকালে বিরোধী বহু নেতাকর্মীকে গুম-খুন, নির্যাতন করেছে।
সর্বশেষ হাজারো ছাত্র-জনতাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। অথচ এসব ঘটনায় জড়িত গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের এখনো গ্রেফতার করতে পারেনি। অনেকে পালিয়ে গেছেন। বিষয়টি জনগণ ভালোভাবে দেখছে না।
এছাড়া গণতন্ত্রের জন্য গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন কমিশনব্যবস্থা সংস্কার, সেদিকে এখন পর্যন্ত কোনো দৃশ্যমান কিছু দেখা যায়নি। জনগণের যে প্রত্যাশা-গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার, তা ফিরিয়ে আনাই প্রথম অগ্রাধিকার হওয়া উচিত।
কারণ, গত তিনটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জনগণ ভোট দিতে পারেনি। বিশেষ করে তরুণ ভোটাররা ভোট দিতে উদ্গ্রীব হয়ে আছে।
সরকারের উচিত হবে জনগণের প্রত্যাশাকে গুরুত্ব দেওয়া। দ্রুত তা না করলে সরকার জনগণের আস্থা হারাতে পারে বলে মনে করেন নেতারা।
আইএনবি/বিভূঁইয়া