নিজস্ব প্রতিবেদক
আওয়ামী লীগের অন্যতম সহযোগি সংগঠন আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবকলীগে উৎসবের আমেজ। দীর্ঘ ৭ বছর পর আগামী ১৬ নভেম্বর সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। কেন্দ্রীয় কাউন্সিলকে ঘিরে কেন্দ্র থেকে তৃনমূল প্রতিটি ইউনিটের নেতাকর্মীরা চাঙা হয়ে উঠেছেন। আগামী দিনের নতুন নেতৃত্ব নিয়ে মাঠের নেতাদের মধ্যে তীব্র আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে। সম্মেলনের পর কাউন্সিলের মাধ্যমে সংগঠনের জন্য ত্যাগী, মেধাবী, নেতাকর্মীদের কাছে গ্রহণযোগ্য এবং পরীক্ষিত নেতাদের দায়িত্বে আনার দাবি উঠেছে তৃনমূল থেকে।
সূত্র মতে, শুধু তৃনমূল নয়, কাউন্সিলরদের প্রত্যক্ষ ভোটের মাধ্যমে সংগঠনের ভিতরে গ্রহণযোগ্য ও ত্যাগী নেতাকে দায়িত্ব আনার দাবি করেছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, মেধাবী এবং পরীক্ষিত নেতাদের কাউন্সিলের মাধ্যমে নেতৃত্বে আনার ইচ্ছাপোষন করেছেন। সেক্ষেত্রে তৃনমূলের মতামতকে প্রাধান্য দিতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে দলের সিনিয়র নেতাদের নির্দেশনা দিয়েছেন।
এদিকে, কেন্দ্রীয় সম্মেলনকে কেন্দ্র করে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে আসতে জোর তৎপরতা চালাচ্ছেন সংগঠনটির ডজন খানেক নেতা। এর মধ্যে সভাপতি আলোচনার আছেন- বর্তমান সহ-সভাপতি নির্মল রঞ্জন গুহ, মতিউর রহমান মতি, সাধারণ সম্পাদক পদে আলোচনায় আছেন কেন্দ্রীয় নেতা আব্দুল আলীম বেপারী, যুগ্ম আফজালুর রহমান বাবু, গাজী মেসবাউল হোসেন সাচ্চু, সালেহ মোহাম্মদ টুটুল, মজিবর রহমান স্বপন। এছাড়াও বিভিন্ন পদে আলোচনায় আছেন- সাংগঠনিক সম্পাদক খায়রুজ্জামান জুয়েল, সহ-দফতর সম্পাদক আজিজুল হক আজিজ, সমাজ কল্যান সম্পাদক নাজমুল করিম নাফা, সহ গন্থনা ও প্রকাশনা সম্পাদক রফিকুল ইসলাম বিটু প্রমূখ। এরা প্রত্যেকেই নিজের সাংগঠনিক কাজের মূল্যায়ণ করার অংশ হিসেবে কাঙ্খিত পদে আসতে চান।
সম্ভ্যাব্য এসব প্রার্থীদের মধ্যে আলোচনার শীর্ষে রয়েছেন সংগঠনটির অন্যতম প্রভাবশালী সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল আলীম বেপারী। স্বেচ্ছাসেবকলীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের একটি বিরাট অংশ এবং সারাদেশের নেতাকর্মীদের অধিকাংশ তাকে আগামী সম্মেলনের মাধ্যমে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দেখতে চান।
স্বেচ্ছাসেবকলীগের একটি সূত্র মতে, স্বেচ্ছাসেবকলীগের তৃনমূল হতে কেন্দ্রীয় সর্বত্র জনপ্রিয়তার শীর্ষে রয়েছেন আব্দুল আলীম বেপারী। সারাদেশের নেতাকর্মীদের মধ্যে দলের জন্য নিবেদিত, পরিশ্রমী, ত্যাগি ও শেখ হাসিনার আদর্শের ভ্যানগার্ড আব্দুল আলীম বেশ পরিচিত। পরিচ্ছন্ন এ রাজনীতিবিদ মাঠের রাজনীতিতে রেখে চলেছেন সফলতার ছাপ। রাজনীতির মাঠের খুবই গুরুত্বপূর্ণ ঢাকা বিভাগে দায়িত্ব পালনে সফলতার সবচে এগিয়ে রয়েছেন। বিভাগটির ২৩ সাংগঠনিক জেলাসহ সবকমিটি উপজেলায় সম্মেলনের মাধ্যমে বির্তকমুক্ত পরিচ্ছন্ন কমিটি গঠন করেছেন। ঢাকা বিভাগের অধিকাংশ উপজেলার ইউনিয়নগুলোতেও রয়েছে স্বেচ্ছাসেবকলীগের শক্তিশালী কমিটি। কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক হলেও ইউনিয়ন সম্মেলনেও অংশ নিয়েছেন আব্দুল আলীম। একমাত্র ঢাকা বিভাগ ছাড়া অন্য বিভাগের অধিকাংশ জেলা কমিটি মেয়াদউত্তীর্ণ।
স্বেচ্ছাসেবকলীগের আব্দুল আলীমের জনপ্রিয়তার প্রমান মেলে সংগঠনটির যেকান কর্মসূচি ও কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে। বিশেষ করে কেন্দ্রীয় সম্মেলন কেন্দ্র করে নেতাকর্মীদের কাছে জনপ্রিয়তার তুঙ্গে রয়েছেন তিনি। প্রতিদিন আব্দুল আলীম অনুসারী সংগঠনটির হাজার হাজার নেতাকর্মী গুলিস্থান কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও ধানমন্ডি কার্যালয়ে ভিড় জমাচ্ছেন।
জানা যায়, শুধু স্বেচ্ছাসেবকলীগ নয়, এর আগে ছাত্রলীগের রাজনীতিতেও আব্দুল আলীম সফলতার ছাপ রেখেছেন। ২০০১ সাল পরবর্তী বিএনপি জামায়াতের সময়ে আওয়ামী লীগের দু:সময়ে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের প্রচার সম্পাদক হিসেবে রাজপথে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। পরবর্তী সম্মেলনে সভাপতি/সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী হিসেবে জনপ্রিয়তা থাকলেও ২৭ বছরের বয়সের সীমার কারণে সুযোগ হয়নি। এর আগে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ( বাহাদুর-অজয়) কমিটির সদস্য, ঢাকা বিশ^বিদল্যায় এসএম হলের ছাত্রলীগ সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, ঢাবি ছাত্রলীগের লোক প্রশাসন বিভাগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৭ সালে স্কুল জীবন থেকেই ছাত্রলীগের রাজনীতিতে জড়িত হন আওয়ামী লীগের রাজনীতির শক্ত ভীতের জেলা শরীয়তপুরের এ সন্তান।
ছাত্রলীগের রাজনীতির পাশাপাশি ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র হিসেবে আব্দুল আলীম বেশ পরিচিত পেয়েছেন। পারিবারিক দীক্ষা থেকেই বঙ্গবন্ধুর আদর্শে ছাত্রলীগের রাজনীতি শুরু করেন। তার পরিবারের সকল সদস্যই আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত।
সফল রাষ্ট্রনায়ক, বঙ্গকণ্যা শেখ হাসিনা হাতকে শক্তিশালী করতে আব্দুল আলীম অনেক ত্যাগ শিকার ও সফলতাও দেখিয়েছেন। ২০০১ সালের জাতীয় নির্বাচনের শেখ হাসিনার নির্বাচনি এলাকা নড়াইল-১ ও ২ আসনে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত টিমের প্রধান ছিলেন আব্দুল আলীম। ২০০১ পরবর্তী সময়ে ছাত্রলীগের প্রচার সম্পাদক হিসেবে রাজপথে আন্দোলন সংগ্রামে অগ্রনী ভূমিকা রাখেন। ঐ সসয়ে বেশ কয়েকবার নির্যাতনের শিকার হন সাবেক এ ছাত্রনেতা। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে গ্রেনেড হামলার আহত হন তিনি। নিজে আহত হলে জীবন ঝঁকি নিয়ে আহতদের উদ্ধারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। যার কারণে পরবর্তীতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা তার সাহসি ভূমিকার প্রশংসা করেন। ২০০৭ সালে এক-এগারো সেনা শাসিত সরকারের সময়ে রাজপথে শেখ হাসিনা মুক্তি আন্দোলনে করতে গিয়ে নির্যাতনের শিকার হন।
স্বেচ্ছাসেবকলীগের রাজনীতিতে পরীক্ষিত, মেধাবী ও ত্যাগী এ নেতাকে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দেখতে চান নেতাকর্মীরা। তারা চান মাঠের রাজনীতিতে তিনি কতটা জনপ্রিয় তা বিচার করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে মূল্যায়ন করার দাবি জানান আলীম অনুসারীরা।
জানতে চাইলে স্বেচ্ছাসেবকলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল আলীম বেপারী প্রতিবেদককে বলেন, পারিবারিক ভাবেই বঙ্গবন্ধুর দু:সাহসিক গল্প শুনে বড় হয়েছি। যার কারণে ছাত্রজীবন থেকেই বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধারণ করি। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বাস্তবায়নে দীর্ঘ সময় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ করেছি। সংগঠনও আমার কর্মের মূল্যায়ণ করেছে এবং বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছি এখনও করছি।
স্বেচ্ছাসেবকলীগের সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী হবার বিষয়ের আব্দুল আলীম বলেন, ছাত্রলীগের রাজনীতির পর শুধু মাত্র নাছিম ভাইকে ভালোবেসে স্বেচ্ছাসেবকলীগ করি। তিনিই আমার নেতা। আমরা আফম বাহাউদ্দিন নাছিমের নেতৃত্বে শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করতে কাজ করি। তিনি যাকে চাইবেন সে দায়িত্বে আসবে এবং প্রার্থীও হবেন। এর আগে আমরা প্রার্থী নই। তবে নেতাকর্মীরা চায়, আমি দায়িত্বে আসি। নেত্রী যদি আস্থা রাখেন, আমার সবোর্চ্চ ত্যাগ শিকার করবো।
১৯৯৪ সালের ২৭ জুলাই ছাত্রলীগের বিভিন্ন পর্যায়ের সাবেক নেতাদের সমন্বয়ে আহবায়ক কমিটির গঠনের মধ্য দিয়ে স্বেচ্ছাসেবক লীগের যাত্রা শুরু হয়। ঐ কমিটির যুগ্ম আহবায়ক ছিলেন কৃষিবিদ আফম বাহাউদ্দিন নাছিম। পরবর্তীতে ২০০৩ সালে সম্মেলনের মাধ্যমে সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতির হিসেবে দায়িত্বে আসেন আফম বাহাউদ্দিন নাছিম। সাধারণ সম্পাদক হন পঙ্কজ দেবনাথ এমপি। মূলত আফম বাহাউদ্দিন নাছিমের নেতৃত্বেই সংগঠনটি সারাদেশে বিস্তৃতি লাভ করে এবং আওয়ামীলীগের অন্যতম শক্তিশালী সহযোগী সংগঠন প্রতিষ্ঠা লাভ করে। ২০১২ সালে সভাপতির দায়িত্বে আসেন মোল্লা মো. আবু কাওসার। সাধারণ সম্পাদক পদে পুনরায় আসে পঙ্কজ দেবনাথ এমপি ।