আইএনবি ডেস্ক: রাজধানীর বিভিন্ন স্কুলে ভর্তির সময় প্রতি বছর অভিভাবকদের নানা খাতে টাকা দিতে হয়। এই খাতের সংখ্যা ৩০ থেকে ৪৫ পর্যন্ত গিয়ে ঠেকে। অভিভাবকদের অভিযোগ, এসব খাতে নেওয়া অর্থের সিংহভাগই অপ্রয়োজনীয় বা অযৌক্তিক। প্রশ্ন হলো, এই খরচগুলো কি আসলেই শিশুদের জন্য প্রয়োজনীয়?
কোথায় কী ব্যয় করা হয়?
প্রতি বছর স্কুল ভর্তিতে অভিভাবকদের অভিভাবক কার্ড, ভর্তি ফরম ফি, আইডি কার্ড ও ফিতা, ম্যাগাজিন, ক্যালেন্ডার, ডায়েরি, গ্রন্থাগার কার্ডের মতো পরিচিত খাতগুলোতে টাকা দিতে হয়। তবে এর বাইরেও রয়েছে অনেক বিস্ময়কর খাত। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়—প্রজেক্টর মেরামত ফি, সৌন্দর্যবর্ধন, মূল্যায়ন, পারিবারিক নিরাপত্তা প্রকল্প, ক্লাব ফি, ল্যাব ফি, দিবস ফি, অনলাইন সুবিধা ফি, সেবামূল্য ও ভ্যাট, এসএমএস চার্জ।
এছাড়া আরও উল্লেখযোগ্য কিছু খাত হলো উন্নয়ন চার্জ, ক্রীড়া ফি, আইসিটি ফি, বিজ্ঞান ফি, দরিদ্র তহবিল, পানি ও বিদ্যুৎ ফি, স্কাউট, বিএনসিসি, রেড ক্রিসেন্ট ফি, হাউস ফি, বিভিন্ন ক্লাব ফি, বিতর্ক ফি, সাংস্কৃতিক ফি এবং পাঠ্যক্রম সংক্রান্ত চার্জ।
নতুন ভর্তির প্রয়োজনীয়তা নিয়ে প্রশ্ন-
অনেক অভিভাবকই প্রশ্ন তুলছেন, প্রতিবছর কেন শিক্ষার্থীদের পুনরায় স্কুলে ভর্তি করাতে হবে? এই সেবাগুলো কি আসলেই শিক্ষার্থীরা পায়? সাধারণত, একজন শিক্ষার্থী একবার ভর্তি হলে পুরো শিক্ষাজীবন সেই একই প্রতিষ্ঠানে থাকে। তাহলে প্রতি বছর নতুন করে ভর্তির নামে এই বাড়তি খরচ কেন বহন করতে হবে—এ প্রশ্নের উত্তর অভিভাবকদের কাছে অজানা।
স্কুলগুলোর ভর্তিসংক্রান্ত কাগজপত্র দেখে অভিভাবকদের উদ্বেগ ক্রমেই বাড়ছে। অনেকেই বলছেন, এসব খাত কি সত্যিই প্রয়োজনীয়? আমাদের সন্তান কি এই সেবাগুলোর প্রকৃত সুবিধা পাচ্ছে? নাকি অন্যায়ভাবে এই খরচের বোঝা আমাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে? অভিভাবকদের এসব প্রশ্ন আজ শিক্ষাব্যবস্থার স্বচ্ছতা নিয়ে নতুন করে ভাবার সুযোগ তৈরি করেছে।
বাড়তি খরচের বোঝা কমানো জরুরি-
শিক্ষা প্রত্যেকের মৌলিক অধিকার। তবে স্কুল ভর্তির অতিরিক্ত খরচ বর্তমানে অনেক অভিভাবকের জন্য অসহনীয় হয়ে উঠেছে। এর ফলে মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত পরিবারগুলো আর্থিক চাপের মুখে পড়ছেন। এই অবস্থায় স্কুল কর্তৃপক্ষের উচিত প্রতিটি খাতের খরচের যৌক্তিক ব্যাখ্যা প্রদান করা।
অপ্রয়োজনীয় ও অযৌক্তিক খরচের খাতগুলো বাদ দেওয়ার জন্য কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া জরুরি। পাশাপাশি, শিক্ষামন্ত্রণালয়কে এ বিষয়ে একটি সুনির্দিষ্ট নীতিমালা তৈরি করে তা কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। অভিভাবকদের সুবিধার্থে খরচের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে স্কুল কর্তৃপক্ষকে আরও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে।
শেষ কথা-
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর উচিত আর্থিক চাপের পরিবর্তে শিশুর মানসম্মত শিক্ষার দিকে বেশি মনোযোগ দেওয়া। অভিভাবকরা আশা করেন, স্কুলগুলো যেন শিশুদের প্রকৃত চাহিদা পূরণ করার পাশাপাশি দায়িত্বশীল ও সদয় আচরণ প্রদর্শন করে। শিক্ষা ব্যবস্থা এমন হতে হবে, যাতে তা সবার জন্য সহজলভ্য হয় এবং শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎকে আরও উন্নত করতে পারে।
আইএনবি/বিভূঁইয়া