সীমা হত্যার বিচারের দাবীতে বৃদ্ধা মায়ের বুক ফাঁটা কান্না, দেখার যেন কেউ নেই

এমডি বাবুল ভূঁইয়া: গাজীপুরের টঙ্গীর শিলমুন এলাকায় বিয়ের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় জোর পূর্বক শ্লীলতাহানী করে সীমা আক্তার (১৫) নামে এসএসসি পরিক্ষার্থীনিকে হত্যা করার অভিযোগে মামলা হওয়ার দুই বছর অতিক্রম হলেও গ্রেফতার হয়নি আসামীরা।

জানা যায়, গত ৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ইং তারিখে মামাতো ভাই সজল ধর্ষনের পর হত্যা করে সীমাকে (১৫)।

নিহত সীমা আক্তার ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর থানার রসুল্লাহবাদ গ্রামের মৃত ফরিদ মিয়ার ৩ মেয়ে ১ ছেলের মধ্যে ছোট মেয়ে। সে তখন স্থানীয় রসুল্লাহবাদ উচ্চ বিদ্যালয়ের এসএসসি পরিক্ষার্থী ছিল।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার রসুল্লাবাদ যুবলীগের সভাপতি ও সীমার কাকা খন্দকার মনির হোসেন জানান, তার ভাতিজী সীমা আক্তার গত ৩০ আগষ্ট তার বড় বোন তাহমিনা বেগমের টঙ্গীর শিলমুন এলাকার একটি ভাড়া বাসায় বেড়াতে আসে। পাশেই সীমার মামা খলিল মিয়ার বাড়ি। ওখানে আসার পর সীমার মামাতো ভাই কেটু ফ্যাক্টরীর শ্রমিক সজল মিয়া (২০) তাকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়। সজলের দেয়া বিয়ের প্রস্তাব সীমা প্রত্যাখান করে। এতে করে সজল সীমার প্রতি ক্ষীপ্ত হয়। এনিয়ে দুজনের মধ্যে বেশ কিছুদিন যাবৎ বিরোধ চলছিলো।

সীমা সজলদের বাড়ির ছাদে কাপড় শুকাতে গেলে সজল তাকে একা পেয়ে আটক করে এবং জোর পূর্বক শ্লীলতাহনী করে। এতে সীমা গুরতর অসুস্থ হয়ে পড়লে বিষয়টি ধামা চাপা দিতে সজল ও তার বড় ভাই জালাল মিলে তাকে সন্ধ্যায় বিবস্ত্র অবস্থায় প্রথমে স্থানীয় ক্যাথারসিস হাসপাতাল ও পরে টঙ্গী শহীদ আহসান উল্লাহ মাষ্টার জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করে। সজল ও জালাল সীমাকে ঢাকায় না নিয়ে স্থানীয় আবেদা হাসপাতালের দালাল বিল্লাল ও সালাউদ্দিনের মাধ্যমে টঙ্গীর আবেদা হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করে। সেখানে সে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় সীমা মারা গেলে সজল ও তার বড় ভাই জালাল বিষয়টি ধামা চাপা দিতে তার বড় বোন তাহমিনাকে বিষয়টি না জানিয়ে গ্রামের বাড়িতে ফোন করে বলে, আপনাদের মেয়ে সীমা বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করেছে।

গ্রামের বাড়ি থেকে ফোন পেয়ে সীমার বড়বোন তাহমিনা আবেদা হাসপাতালে গেলে সজল ও জালাল হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যায়।

নিহত সীমার বোন তাহমিনা জানায়, আমাকে কিছু জানানো হয়নি। গ্রামের বাড়ি থেকে আমাকে ফোন করে জানানো হয়েছে সীমা বিষ খেয়েছে তাকে হাসপাতালে রাখা হয়েছে। আমার বোনকে হাসপাতালে গিয়ে বিবস্ত্র অবস্থায় মৃত পেয়েছি, তাকে সজল জোর পূর্বক শ্লীলতাহানী করে হত্যা করেছে বলে মনে হচ্ছে। তারা বিষ খাওয়ার কথা বললেও সীমার মুখে কোন বিষের গন্ধ পাইনি। আমার বোনকে হত্যা করা হয়েছে।

পরে খবর পেয়ে টঙ্গী থানা পুলিশ এর সহযোগিতায় টঙ্গী সরকারি হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত ডাক্তার মৃত বলে ঘোষনা করেন। লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য টঙ্গী থানা পুলিশ নিয়ে যান। ঘটনার পর ঘাতক সজল ও জালাল পলাতক রয়েছে।

পরবর্তিতে টঙ্গী পূর্ব থানায় ০৮/০৯/২০১৮ ইং তারিখে একটি এজাহার দায় করা হয় যার মামলা নং- ২৭(৯)২০১৮। এবং মামলার তদন্ত অফিসার ছিলেন এস আই রমজান আলী ।

এঘটনার পর থেকে স্যোসাল মিডিয়ায় সীমাকে হত্যার সাথে জড়িতদের গ্রেফতার ও শাস্তির দাবীতে তুলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।

দুই বছর অতিক্রম হলেও সীমা হত্যার বিচার এখনো হইনি। সিমার মা বলেন আসামী পক্ষ ক্ষমতাসীন হওয়ায় এরা আমার মেয়েকে নির্যাতন করে হত্যা করার পরও খুনিরা প্রকাশ্যে দিবালোকে বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এব্যাপারে কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি। বিচার না পেয়ে সীমার অসহায় পরিবার মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ ও সহযোগিতা কামনা করছেন।

পুণরায় কয়েকদিন ধরে সীমা হত্যার প্রধান আসামী সজল ও জালালসহ আসামীদের গ্রেফতারের দাবীতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম স্যোসাল মিডিয়ায় তোলপার শুরু হলে সীমার মা, এবং বড় ভাইকে হত্যার হুমকি প্রদান করছে বলে দাবী তোলেন তার ভাই সাইদুল খন্দকার।

আসামীগন নিহত সীমার মাকে হুমকি দিয়ে বলেন, বেশি বাড়াবাড়ি করলে তোর ছোট মেয়ের মতন ঢাকায় তোর বড় মেয়েকেও মেরে ফেলবো।

ঘটনার সময় বিভিন্ন নিউজ পোর্টল এবং দৈনিক কালের কন্ঠ সহ কিছু জাতীয় পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছিল।

নিহত সীমার পরিবারের এবং তার মায়ের একটাই দাবি, তারা সীমা হত্যার সঠিক বিচার চায়।

আইএনবি/বি.ভূঁইয়া