ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি : ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে দুই সন্তানের জননী এক গৃহবধূ ধর্ষণের বিচার চাইতে গিয়ে এখন বিপাকে পড়েছেন। প্রভাবশালী কয়েকজন গ্রাম্য সর্দারদের নানা চাপে ধর্ষণের শিকার ওই গৃহবধূ এখন বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন।
ভুক্তভোগী নারীর পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ, ধর্ষণের অভিযোগে করা মামলা তুলে না নেওয়ায় তাদের ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালানো হয়েছে এবং এখনও অব্যাহত আছে। গ্রামের কয়েকজন প্রভাবশালী সর্দার-মাতাব্বর ধর্ষকের পক্ষ নিয়ে মামলা তুলে নিতে ধর্ষিতার পরিবারকে চাপ সৃষ্টির পাশাপাশি নানা হয়রানি করছেন। ফলে প্রভাবশালীদের হুমকির কারণে ধর্ষণের শিকার গৃহবধূ ও তার পরিবারের লোকেরা মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
পুলিশ ও ওই গৃহবধূর পরিবারের ভাষ্যমতে, গত ২৪ ফেব্রুয়ারি রাতে সরাইল উপজেলার কালিকচ্ছ ইউপির ধর্মতীর্থ চাকসার গ্রামের ওই গৃহবধূ প্রবাসীর স্ত্রীকে ঘর থেকে তুলে সিএনজি অটোরিকশাযোগে অপহরণ করে নিয়ে যায়।
পরে কালিকচ্ছ এলাকায় এক বাড়িতে আটকে রাখে সেলিম মিয়া নামে এক বখাটে যুবক। এসময় তার সঙ্গে আরও অজ্ঞাতনামা ৩/৪জন লোক ছিলো। সেলিম মিয়া চাকসার গ্রামের আবদুর রশিদের ছেলে। পরে বখাটে সেলিম ওই গৃহবধূকে রাতভর জোরপূর্বক ধর্ষণের পর, ভোরে গৃহবধূকে চাকসার গ্রামের রাস্তায় ফেলে আসে। ঘটনাটি এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গকে জানিয়ে ভুক্তভোগী গৃহবধূ বাদী হয়ে ২৬ ফেব্রুয়ারি থানায় মামলা দায়ের করেন। পরে পুলিশ অভিযান চালিয়ে ধর্ষক সেলিম মিয়াকে গ্রেফতারের পর আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে প্রেরণ করে।
এদিকে ধর্ষণ মামলা দায়ের ও সেলিম গ্রেপ্তারের পর একটি প্রভাবশালী মহল ধর্ষকের পক্ষ নিয়ে ধর্ষিতার পরিবারের বিপক্ষে অবস্থান নেয়। তারা বিষয়টি ধামাচাপা দিতে মরিয়া হয়ে ওঠেছে। একপর্যায়ে ধর্ষণের বিষয়টি নিষ্পত্তি করতে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি বিকেলে গ্রামের বয়োজ্যেষ্ঠ মুরব্বি ও সাবেক ইউপি সদস্য মো. জজ মিয়ার বাড়িতে এক সালিশ বসে।
সালিশের একপর্যায়ে ধর্ষক সেলিম মিয়ার পিতা আবদুর রশিদের হুকুমে ১৮/১৯ জন লোক দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে উপস্থিত ধর্ষিতা গৃহবধূ ও তার পরিবারের লোকদের ওপর হামলা চালিয়ে তাদেরকে বেধড়ক মারধোর করে। এতে ধর্ষিতা নারীর ভাবী ও ভাই সহ পাঁচজন আহত হন।
পরে এ হামলার ঘটনায় গত ১ মার্চ ধর্ষিতা নারীর ভাসুর (স্বামীর বড় ভাই) ১৪ জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাতনামা আরও ৪/৫ জনের বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করলে পুলিশ বিষয়টি আমলে নিয়ে মামলা রেকর্ড করে।
ধর্ষণের শিকার ওই গৃহবধূ’র পরিবারের অভিযোগ, গ্রামের কয়েকজন সর্দার বাণিজ্য করতেই ধর্ষক সেলিমের পক্ষ নিয়ে তারা ধর্ষণের ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার অপচেষ্টা করছেন। তাদের ইশারায় সালিশ সভায় প্রকাশ্যে ধর্ষকের লোকজন ধর্ষিতার পরিবারের লোকদের বেধড়ক পিটিয়ে আহত করে। শুধু তা-ই নয়, এসব প্রভাবশালী সর্দারদের সহযোগিতায় হামলাকারীরা আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে সহজেই দুইদিন আগে আদালত থেকে জামিনে বেরিয়ে এসে ফের ধর্ষিতার পরিবারকে হুমকি-ধমকি দিচ্ছে। এতে ভয়ে ও আতঙ্কে ধর্ষিতা ওই নারী বাড়ি ছেড়ে আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন।
এ ব্যাপারে এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও সরাইল থানার উপ-পরিদর্শক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ধর্ষণ মামলা হওয়ার পরপরই ধর্ষক সেলিম মিয়াকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাকে অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে রিমান্ড চাওয়া হয়েছিলো। কিন্তু আসামিকে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দিয়েছেন আদালত।
ধর্ষণের ঘটনায় সালিশ এবং সেই সালিশে হামলার বিষয়ে এসআই জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ধর্ষণের ঘটনা সালিশে নিষ্পত্তি করার এখতিয়ার গ্রাম্য সর্দারদের নেই। সালিশে হামলার ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। আমি আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান চালিয়েছিলাম। এ মামলার দু’জন আসামি ছাড়া সকলেই আদালত থেকে জামিন নিয়ে থানায় রিকল জমা দিয়েছেন।
আইএনবি/বিভূঁইয়া