কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি: হিমালয় পাদদেশ ঘেঁষা কুড়িগ্রামের রাজারহাটে শৈত্য প্রবাহের কারণে দুঃস্থ্য মানুষজনের মাঝে চরম দূর্ভোগের সৃষ্টি হয়েছে।
গত ৩ দিন ধরে স্পষ্টভাবে সূর্যের দেখা মিলেনি। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই তাপমাত্রা কমতে থাকে। সেই সাথে উত্তরের হিমেল হাওয়ায় শুরু হয় হাঁড় কাঁপানো ঠান্ডা। প্রচন্ড ঠান্ডায় খেঁটে খাওয়া মানুষজন জড়োসড়ো হয়ে থাকে। সবমিলিয়ে শীতে কাঁপছে রাজারহাট উপজেলার সর্বত্র।
রাজারহাট আবহাওয়া অধিদপ্তরের ইনচার্জ সুমন চন্দ্র সরকার জানান, ২০ ডিসেম্বর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১০.৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। আগামীকাল তাপমাত্রা আরো কমে যাওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। এ আবহাওয়া আরো ১/২ দিন এ রকম থাকতে পারে।
এরপর মৃদ্যু শৈত্য প্রবাহ ও হিমেল হাওয়ার সঙ্গে ঘন কুয়াশা এবং হালকা বৃষ্টি হতে পারে। শীত নিবারণের জন্য গ্রামাঞ্চলের নিম্ন আয়ের মানুষরা খড়-কুটোতে আগুন জ্বালিয়ে বয়স্ক ও শিশুরা শীত নিবারনের জন্য আগুন পোহাতে দেখা গেছে।
তিস্তা ও ধরলা নদীর চরাঞ্চলগুলোতে ছিন্নমুল পরিবারগুলো অতি কষ্টে পরিবার-পরিজন নিয়ে জীবন যাপন করছে। অতিরিক্ত ঠান্ডার কবল থেকে রক্ষা করতে গবাদিপশু গরু-ছাগলের গায়ে ছেঁড়া কাঁথা ও চটের বস্তা তুলে দিয়েছে। বিশেষ করে এ এলাকার প্রায় ৬৫০টি গরুর খামারী চরম বিপাকে পড়েছে। শীত থেকে বাঁচতে গ্রামাঞ্চলের নিম্ন আয়ের মানুষজন ফুটপাতের দোকানগুলোতে গরম কাপড় কিনতে ভিড় করছে। প্রচন্ড বয়ে যাওয়া শৈত্য প্রবাহে বিশেষ কাজ ছাড়া মানুষরা ঘরের বাইরে বের হচ্ছে না। বিশেষ করে বৃদ্ধ ও শিশুদের নিয়ে অনেক পরিবার চরম বিপাকে পড়েছে। হাট-বাজারগুলোতে মানুষজনের উপস্থিতি কমে গেছে।
দুঃস্থ ও ছিন্নমুল মানুষরা অর্থাভাবে শীতবস্ত্র কিনতে পারছে না। অন্যান্য বছরের চেয়ে এ বছরে শীতবস্ত্রের দাম চড়া হওয়ায় নিম্ন আয়ের মানুষরা চরম বিপাকে পড়েছে। গত কয়েকদিন ধরে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে দুঃস্থ পরিবারের বিভিন্ন বয়সী মানুষরা শীতবস্ত্রের জন্য রাজারহাট উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে ভিড় করতে দেখা গেছে। কিন্তু শীতবস্ত্র পর্যাপ্ত না থাকায় অনেকেই দীর্ঘ সময় অপেক্ষার পর খালি হাতে বাড়ি ফিরতে হয়।
বিদ্যানন্দ ইউপির তিস্তা নদীর বাঁধের উপর বসবাসকারী জাবরা ম-ল (৮০), রমিতা বেওয়া (৬৫)সহ বেশ কয়েকজন থর থর করি কাঁপতে কাঁপতে বলেন, বাহে বেড়ার ফাঁক দিয়া শীত হুর হুর করি ঢুকছে। জারত হাঁড্ডিগুলা কাঁপি উঠে। এ বছর হামরাগুলা সরকারিভাবে কোন শীতের কাপড় পাইনি। অনেক কষ্ট করে বাঁধ রাস্তায় বসবাস করছি। রাজারহাট উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সজিবুল করিম জানান, এ পর্যন্ত ৪ হাজার ৭শত ৪০ পিচ কম্বল বরাদ্দ এসেছে। এসব কম্বল উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের চেয়ারম্যানদের মাঝে বন্টন করে দেয়া হয়েছে। শীতার্ত মানুষজনের মাঝে বিতরণ করার জন্য।
এ বিষয়ে রাজারহাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাঃ যোবায়ের হোসেন জানান,সরকারিভাবে বরাদ্দকৃত কম্বলগুলো ইতিমধ্যে বিতরণ সম্পন্ন হয়েছে। নতুনভাবে শীতবস্ত্রের চাহিদা চেয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
আইএনবি/এম.আ/বিভূঁইয়া