আইএনবি নিউজ: রাজধানী ঢাকা এবং বন্দরনগরী চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্থানে বিলাসবহুল অফিস খুলে ২০০৬ সাল থেকে চক্রটি প্রতারণা করছে। ১৫ বছর আগেও মজিবর রহমান ছিলেন একজন রিকশাচালক। এখন শতকোটি টাকার মালিক। শুধু মজিবরই নন, তার প্রধান পাঁচ সহযোগী শতশত কোটি টাকার মালিক। ‘রূপসা মাল্টি পারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি’, ‘রূপসা উন্নয়ন ফাউন্ডেশন’সহ বিভিন্ন নামে ভুয়া কোম্পানি খুলে হাজার হাজার গ্রাহকের আমানতের টাকা আত্মসাৎ করে চক্রের সদস্যরা এখন ‘আঙুল ফুলে কলাগাছ’।
চক্রটি একটি নির্দিষ্ট এলাকায় প্রথমে অফিস খুলে বিপুলসংখ্যক কর্মী নিয়োগ দেয়। লোভনীয় অফার দিয়ে সাধারণ গ্রাহকদের কাছ থেকে আমানত সংগ্রহ করে। এক থেকে দেড় বছর পর্যন্ত চুক্তি অনুযায়ী লভ্যাংশও দেয়। এ সময়ে হাজার হাজার গ্রাহকের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের অর্থ সংগ্রহ করে। তারপর হঠাৎ করে এলাকা থেকে সটকে পড়ে চক্রটি। এভাবে তারা সাধারণ মানুষের কাছ থেকে হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে। চক্রের নিয়ন্ত্রক মজিবরসহ ছয়জন।
এমন ভয়ঙ্কর প্রতারণার অভিযোগ পেয়ে বুধবার বন্দরনগরী চট্টগ্রামের ইপিজেড এলাকার রূপসা উন্নয়ন ফাউন্ডেশন নামে ভুয়া কোম্পানির অফিসে অভিযান চালায় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সিরিয়াস ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিম। অভিযানে চক্রের অন্যতম তিন হোতা রাসেল হাওলাদার, মুসা হাওলাদার ও গোলাম ফয়সালকে ৮ কোটি ৪২ লাখ টাকাসহ গ্রেপ্তার করে ডিবি। ওই দিনই এনামুল হক এনাম নামে এক ভুক্তভোগী তিন কোটি ১০ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে চক্রের প্রধান মজিবর, গ্রেপ্তার তিন আসামিসহ ৬ হোতার নাম উল্লেখ করে মামলা করেন। অন্য দুজন আসামি হলো জাকির হোসেন হাওলাদার ও এজাজুল খান। মামলায় অজ্ঞাত আরও কয়েকজনকে আসামি করা হয়। এদিকে গ্রেপ্তার তিনজনকে বৃহস্পতিবার আদালতের মাধ্যমে তিন দিনের রিমান্ডে নিয়েছে ডিবি।
ডিবির সিরিয়াস ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিমের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) মো. সোলায়মান মিয়া আমাদের সময়কে বলেন, মাল্টি পারপাস সোসাইটির নামে প্রতারণার অভিযোগে গ্রেপ্তার চক্রের তিন সদস্যকে রিমান্ডে এনে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। চক্রের হোতাসহ অন্য সদস্যদের আইনের আওতায় আনার চেষ্টা চলছে।
মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, ২০০৬ সাল থেকে চক্রটি চট্টগ্রামে ‘রূপসা মাল্টি পারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি’ নামে ভুয়া কোম্পানি খুলে প্রতারণা শুরু করে। ২০১৫ সালে তারা ঢাকার মতিঝিলের ২৯২, ইনার সার্কুলার রোডে অফিস নেয়। ২০১৮ সাল পর্যন্ত সেখানে অফিস ছিলো। হাজার হাজার গ্রাহকের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ সংগ্রহের পর তারা পালিয়ে যায়।
চট্টগ্রামে চক্রটির বিশাল নেটওয়ার্ক রয়েছে উল্লেখ করে ডিবির এক কর্মকর্তা বলেন, চট্টগ্রামে এ প্রতারক চক্রের চারটি শাখা অফিস রয়েছে। সেখানে এক হাজারেরও বেশি কর্মী রয়েছে। চট্টগ্রামের ইপিজেড অফিসে অভিযান চালিয়ে প্রায় সাড়ে ৮ কোটি টাকা উদ্ধার করা হয়। এ টাকার উৎস সম্পর্কে গ্রেপ্তার চক্রের সদস্যরা কোনো সদুত্তর দিতে পারেনি।
চক্রের প্রধান মজিবর সম্পর্কে ডিবির কর্মকর্তারা জানান, ২০০৬ সালের আগে মজিবর রিকশাচালক ছিলো। রিকশাচালক থেকে কীভাবে তিনি ভয়াবহ প্রতারণায় জড়িয়ে পড়েছেন এ বিষয়ে অনুসন্ধান চলছে। তিনি ভুয়া কোম্পানির চেয়ারম্যান। তার গ্রামের বাড়ি পটুয়াখালীর কলাপাড়া থানার নেওয়াপাড়ায়। তার বাবার নাম আমজাদ আলী। তার বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। চক্রটি প্রতারণা করে কী পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে এ বিষয়ে এখনই নিশ্চিত করে বলা সম্ভব নয়। এ বিষয়ে অনুসন্ধান চলছে। চক্রের সদস্যরা চট্টগ্রামে বিপুল পরিমাণ অর্থ-সম্পদ গড়েছেন বলে প্রাথমিকভাবে তথ্য পাওয়া গেছে। এ বিষয়গুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে।আমাদের সময়
আইএনবি/বিভূঁইয়া