আইএনবি ডেস্ক: রাজধানীর বাণিজ্যিক প্রাণকেন্দ্র মতিঝিলে গড়ে উঠেছে দেশের নামিদামি সব ক্লাব। প্রায় শত বছরের পুরোনো এই ক্লাবগুলোকে নিয়ে এক সময় মেতে উঠত দেশবাসী। তবে সেই দিন আর নেই। ক্যাসিনোর ধাক্কায় সুনসান নীরবতা নেমে এসেছিল ক্লাব পাড়ায়। ক্যাসিনোর কালো থাবা পড়েছিল ক্লাবপাড়ায়। তবে সব কিছু ছাপিয়ে আবারো আগের অবস্থানে ফিরে যেতে চাইছে ক্লাবগুলো। তারই ধারবাহিকতায় খোলা হচ্ছে অফিস কক্ষের তালা। আলোচনায় বসছেন ক্লাবগুলোর সিনিয়র সদস্যরা। তবে সরকারিভাবে সিলগালা করে দেওয়া ৪টি ক্লাবে এখনো ঝুলছে তালা।
রাজধানীর মতিঝিলের ক্লাবগুলোতে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, প্রধান ফটকগুলোতে রয়েছেন নিরাপত্তা কর্মী। ক্লাবগুলোর চারপাশ পরিষ্কার আর সাজানো-গোছানো। ক্লাবগুলোর সিনিয়র সদস্যরা সবকিছু স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছেন। বিকেলে ও সন্ধ্যায় বসছে সিনিয়র সদস্যদের খেলার আসর। ক্লাবের নিজস্ব দলও যোগ দিচ্ছেন নিয়মিত টুর্নামেন্টগুলোতে। তবে এখনও অনেক সদস্যের মধ্যে এক ধরনের ভিতি কাজ করছে। অনেকেই গ্রেপ্তার বা হয়রানির ভয়ে নিজেকে আড়াল করে রেখেছেন।
ক্লাবগুলোর সাধারণ সদস্যরা বলছেন, ক্যাসিনোর কালো থাবা থেকে আমরাও বেরিয়ে আসতে চাই। ক্লাবগুলো চালু করা না গেলে অনেক খেলোয়াড় বেকার হয়ে যাবে। তারা বলছেন, ক্লাবগুলো চালানোর দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিদের সব কিছু যাচাই করেই দায়িত্ব দিতে হবে। আমরাও চাই ক্লাবগুলোকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে কেউ যেন কোটি টাকার পাহাড় না গড়তে পারে।
ওয়ারী ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শামসুল আলম বলেন, আমাদের এই ক্লাবটিতে ১০০ বছর ধরে হাউজি খেলা হয়ে আসছে। এটার জন্য সরকার অনুমতি দিয়েছিল। এই হাউজি খেলায় যা লাভ হতো তা ক্লাবে জমা করা হতো। সেই টাকা দিয়ে দলের খেলোয়াড়দের বেতন দেওয়া হতো। আমাদের তো আর কোনো আয়ের উৎস নেই। সরকার এখন সব বন্ধ করে দিয়েছে। যার ফলে ক্লাবে এখন আর কেউ আসছে না। কেউ যদি সময় না কাটাতে পারে তবে এখানে কেন আসবে।
তিনি আরও বলেন, আমরা সরকারের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্ঠা করছি। সরকার যেন আবারও আমাদেরকে আগের মত চলার অনুমতি দেয় সে জন্য সরকারের কাছে আবেদন করেছি।
ওয়ান্ডারস ক্লাবের সহ সভাপতি সানি মাহাতাব বলেন, আমাদের দলগুলোর পৃষ্ঠপোষকতার অভাব। এই দলগুলো চালাতে যদি দেশের বড় বড় ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান এগিয়ে না আসে তবে আমাদের দল পরিচালনা করা কঠিন হবে। আমরা টাকার যোগান না দিতে পেরে জুয়ার দিকে হাত বাড়াতে হচ্ছে। এভাবে আসলে ক্লাব চালানো যায় না। তিনি আরও বলেন, আমাদের ক্লাবটি বর্তমানে সিলগালা করে দেওয়া হয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি সরকারের উচ্চ পর্যায়ে যোগাযোগ করে ক্লাবটি চালু করার।
ক্লাবগুলোতে কিছু সদস্যের আনাগোনা বাড়লেও সচল না হওয়ায় হতাশ প্রকাশ করেন পিয়নের দায়িত্বে থাকা কফিল উদ্দিন। তিনি বলেন, প্রায় ৩০ বছর ধরে এই ক্লাবের সাথে জড়িত। ক্লাব বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আর্থিক সংকটে আছি। ছেলে-মেয়েদের পড়া লেখার খরচও ঠিক মত চালাতে পারছি না। এভাবে আর কত দিন থাকবে সেটাও বোঝা যাচ্ছে না। এভাবে চলতে থাকলে এই শহর ছেড়ে অন্য কোথাও চলে যেতে হবে।
ক্যাসিনো অভিযানে সিলগালা করে দেওয়া ফকিরাপুলের ইয়ংমেনস ক্লাব, ঢাকা ওয়ান্ডারাস ক্লাব, গুলিস্তানের মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়াচক্র এবং বনানীর আহমদ টাওয়ারের গোল্ডেন ঢাকা বাংলাদেশ এই ক্লাবগুলোর ভাগ্যে কি আছে তা এখনও স্পষ্ট নয়। সরকারের উপর মহল চাইছে ক্লাবগুলো চালু না করতে। তবে এই ক্লাবগুলো বেশি দিন বন্ধ থাকলে আনেক পেশাদার খেলোয়াড় বেকার হয়ে যাবে। তারা নতুন করে দলে যোগ দিতেও বেশ বেগ পেতে হবে।
বাংলাদেশ জার্নাল
আইএনবি/বিভূঁইয়া