মোবাইল রিচার্জে ১০০ টাকার মধ্যে ৫৬ টাকাই ভ্যাট

আইএনবি ডেস্ক: মোবাইলে কথা বলা ও ইন্টারনেট ব্যবহারে ফের খরচ বাড়ছে। এবার এই সেবার ওপর ৩ শতাংশ সম্পূরক কর বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যা সরকারের পক্ষ থেকে অনুমোদনও দেওয়া হয়েছে। যেকোনো সময় এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি হতে পারে।

বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে মোবাইল ফোন সেবায় সম্পূরক শুল্ক ১৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২০ শতাংশ করা হয়েছিল। সেটি এখন আরও বাড়িয়ে ২৩ শতাংশ করতে যাচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার।

সে অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত মোবাইলে ১০০ টাকার রিচার্জ করলে সম্পূরক শুল্ক, ভ্যাট ও সারচার্জ দিতে হয় ২৮ দশমিক ১ টাকা, রেভেনিউ শেয়ার ও মিনিমাম ট্যাক্স দিতে হয় ৬ দশমিক ১ টাকা, পরোক্ষ কর দিতে হয় ২০ দশমিক ৪ টাকা।

অর্থাৎ, গ্রাহক ১০০ টাকা রিচার্জ করলে সবমিলিয়ে কর দিতেন ৫৪ দশমিক ৬ টাকা।

অন্তর্বর্তী সরকার সম্পূরক শুল্ক আরও ৩ শতাংশ বাড়ালে কর দিতে হবে ৫৬ দশমিক ৩ টাকা। যার মধ্যে সম্পূরক শুল্ক, ভ্যাট ও সারচার্জ কাটবে ২৯ দশমিক ৮ টাকা। রেভিনিউ শেয়ার ও মিনিমাম ট্যাক্স কাটবে ৬ দশমিক ১ টাকা, পরোক্ষ কর কাটবে ২০ দশমিক ৪ টাকা।

অর্থাৎ, সামনে থেকে গ্রাহক ১০০ টাকা রিচার্জ করলে সবমিলিয়ে কর দিতে হবে ৫৬ দশমিক ৩ টাকা।

ফলে এখন গ্রাহক ১০০ টাকায় ব্যবহার করতে পারবেন মূলত মাত্র ৪৩ টাকা ৭০ পয়সা।

এদিকে, মোবাইলে ফোন সেবায় দফায় দফায় খরচ বাড়ায় ইন্টারনেট গ্রাহক কমছে। তাছাড়া অনেকে ডাটা ব্যবহারের খরচে কাটছাঁট করছেন। এতে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তিতে এগিয়ে যাওয়ার বদলে উল্টোপথে হাঁটছে দেশের মানুষ।

বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী—গত নভেম্বর মাসে মুঠোফোনের গ্রাহক ছিল ১৮ কোটি ৮৭ লাখ, যা গত জুনের চেয়ে ৭৩ লাখ কম। অন্যদিকে জুনের চেয়ে মুঠোফোনে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৯৭ লাখ কমে ১৩ কোটি ২৮ লাখে নেমেছে।

ভয়েস কল এবং ইন্টারনেট ডাটায় নতুন করে কর বাড়ানোর সিদ্ধান্তকে বৈষম্যমূলক আচরণ বলে মন্তব্য করেন বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. মহিউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, এনবিআরের ওপর ফ্যাসিবাদ সরকারের আত্মা ভর করেছে। সেজন্যই নতুন করে গ্রাহকদের ওপর অনৈতিকভাবে সম্পূরক শুল্ক আরোপ করতে যাচ্ছে। আমরা মনে করি এ ধরনের হঠকারী সিদ্ধান্ত একমাত্র তারাই নিতে পারে যাদের ওপর বিগত ফ্যাসিবাদী সরকারের ছায়া রয়েছে। ইন্টারনেট পরিষেবায় আমরা বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় তলানিতে আছি কিন্তু ভ্যাটের ক্ষেত্রে বিশ্বের সর্বোচ্চ স্থানে। যেখানে দেশের এখনো ৪৮ শতাংশ জনগণ ইন্টারনেট সেবার বাইরে আছে সেখানে নতুন করে এই উচ্চ কর নাগরিকদের ইন্টারনেট সেবা থেকে বিমুখ করবে। এমন সিদ্ধান্ত নতুন করে বৈষম্য সৃষ্টি করবে।

জনগণের পকেট কাটার জন্য এমন সিদ্ধান্ত অযৌক্তিক এবং অগ্রহণযোগ্য উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতা প্রাণ দিয়েছিল জবাবদিহিতামূলক গণতন্ত্র ও সেবামূলক রাষ্ট্র গঠন করার জন্য। কিন্তু বর্তমান সরকার এবং এনবিআর সামাজিক দায়বদ্ধতার বিষয়টি ভুলে গিয়ে রাষ্ট্রের অর্থ যোগানোর জন্য জনগণের পকেট কাটার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যা হঠকারী, অযৌক্তিক এবং ফ্যাসিবাদী আচরণের অংশ। এমন সিদ্ধান্ত থেকে তাদের সরে আসতে হবে।

আইএনবি/বিভূঁইয়া