আন্তর্জাতিক ডেস্ক: গত ২১ জুলাই রাতে নিমপুরায় এলাকায় মৃত্যু হয় রেলের অস্থায়ী কর্মী এম ঈশ্বর রাও (৪৪)-এর। তিনি ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের বিদায়ী তৃণমূল কাউন্সিলর ভেঙ্কট রামনার ভাই।
তিন দিন আগে বাড়িতে মৃত্যু হয় বিদায়ী কাউন্সিলরের ভাইয়ের। পল্লী চিকৎস্ক বলেছিলেন, হৃদরোগে মৃত্যু তাই ময়নাতদন্ত ছাড়াই সৎকারও হয়ে যায়।
এ বার মৃত সেই রেলকর্মীর মেয়ে অভিযোগ তুলল, তার মা ও পুরুষবন্ধু মিলেই বাবাকে খুন করেছে। খড়্গপুরের ১৩ নম্বর রেল ওয়ার্ডের নিমপুরায় এমন অভিযোগ ঘিরে শনিবার শোরগোল পড়ে।
ঈশ্বরের মেয়ে শ্রুতি লায়া দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী। তার অভিযোগ, পেশায় রেলকর্মী তার মা এম স্বাতী রামাইয়া ও মায়ের পুরুষ সঙ্গী কে নাওকা রাজু মিলে খুন করেছে ঈশ্বরকে। নিজেকে ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে দাবিও করেছে শ্রুতি। তার অভিযোগের ভিত্তিতে খুনের মামলা রুজু করে এ দিনই মৃতের স্ত্রী সাতী ও রাখাজঙ্গলের বাসিন্দা রাজুকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ধৃতদের খড়্গপুর মহকুমা আদালতে হাজির করেছে।
অবশ্য খুনের মামলা দায়েরের আগেই ময়নাতদন্ত ছাড়া মৃতদেহের সৎকার হয়ে যাওয়ায় তদন্তে বেগ পেতে হচ্ছে পুলিশকে। খড়্গপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কাজী সামসুদ্দিন আহমেদ বলেন, মৃতের মেয়ের অভিযোগের ভিত্তিতেই খুনের মামলা রুজু করে দু’জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মৃতদেহের সৎকার হয়ে গেলে তদন্তে সমস্যা হয় ঠিকই। তবে যেহেতু ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী মেয়ে নিজেই এই অভিযোগ করেছে সেটা আমাদের তদন্তে সাহায্য করবে। আমরা তদন্তের কিনারা করে ফেলব।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, পেশায় রেল কারখানার অস্থায়ী কর্মী ঈশ্বর রাও মদ্যপান করত। এই নিয়ে বাড়িতে স্ত্রী স্বাতীর সঙ্গে নিত্য অশান্তি হত। রেলের ওয়ার্কস বিভাগের কর্মী স্বাতী। জানা যাচ্ছে, অশান্তি হলেই স্বাতীর পক্ষ নিয়ে রাখাজঙ্গল থেকে নিমপুরায় পৌঁছে যেত রেলকর্মী নাওকা রাজু। এ সব নিয়ে ক্রমেই অশান্তি বাড়ছিল।
এলাকার বিদায়ী কাউন্সিলর ভেঙ্কট রামনা বলেন, ভাই মদ্যপান করায় আমি বেশি খোঁজ রাখতাম না। আমার ভাইয়ের স্ত্রী স্বাতীর সঙ্গে ওঁর বাপের বাড়ির পাড়ার রাজুর ঘনিষ্ঠতা বাড়ছিল বলে শুনছিলাম। ২১ জুলাই রাতে জানতে পারি ভাই অসুস্থ। কোনও চিকিৎসক না পেয়ে এক কোয়াক ডাক্তারকে নিয়ে ভাইয়ের কোয়ার্টারে যাই। কোয়াক ডাক্তারও বিষয়টি না বুঝেই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু বলে দেন। আমরা পুলিশকে জানিয়ে শ্মশানে ২২ জুলাই দেহ দাহ করি।
এর পরেই গোটা ঘটনা অন্য দিকে মোড় নেয়। ২৪ জুলাই সন্ধ্যায় মৃতের মেয়ে শ্রুতি ও ৭ বছরের ছেলে কাঁদতে-কাঁদতে রামনার কাছে আসে। বাবাকে খুন করা হয়েছে বলে চাচা রামনাকে জানায় শ্রুতি।
ওই তরুণীর কথায়, ২১জুলাই রাতে আমি ও ভাই পাশের ঘরে ছিলাম। বাবার গোঙানোর আওয়াজ পেয়ে ওই ঘরে গিয়ে আলো জ্বালিয়ে দেখি রাজু নামে মায়ের বন্ধু বাবাকে গলা টিপে মারছে। মা দাঁড়িয়ে রয়েছে। আমি বাধা দিতে গেলে মা আমাকে টেনে ধরে। কাউকে কিছু বলতে না করেছিল মা।
শ্রুতির দাবি, এই ক’দিন মা তার উপর নজরদারি চালাচ্ছিল। শুক্রবার কোনওরকমে কোয়ার্টার থেকে পালিয়ে চাচাকে সে সব জানায়। মা ও মায়ের পুরুষবন্ধুর শাস্তিরও দাবি করেছে শ্রুতি।
আনন্দবাজার
আইএনবি/বিভূঁইয়া