পিলখানা ট্র্যাজেডিতে ভারত-হাসিনা জড়িত

আইএনবি ডেস্ক:পিলখানা ট্র্যাজেডির মূল হোতাদের মুখোশ উন্মোচন এবং তাদের বিচারের আওতায় আনতে আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে (আইসিটি) যাবেন বলে জানিয়েছেন শহীদ সেনা পরিবারগুলোর সদস্যরা।

তারা বলেছেন, ‘এই ঘটনার সঙ্গে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগ নেতা শেখ সেলিম, শেখ ফজলে নূর তাপস, মির্জা আজম, জাহাঙ্গীর কবির নানক, এবং পিলখানা ট্র্যাজেডিতে ভারত-হাসিনা জড়িতসাবেক কয়েকজন সেনা কর্মকর্তা জড়িত।

ভারতের পরিকল্পনায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মনোবল ভেঙে দিতে এই ট্র্যাজেডি হয়েছে। যেহেতু মূল হোতারা প্রভাবশালী সে কারণে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিধান অনুসারে আমাদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে হবে।

’ এই ট্র্যাজেডির সময় অপপ্রচার চালানোর জন্য কয়েকজন সাংবাদিকের বিরুদ্ধেও অভিযোগ আনা হতে পারে বলেও জানান তারা। এ ছাড়া ২৫ ফেব্রুয়ারিকে শহীদ সেনা দিবস ঘোষণা এবং ঢাকায় যেকোনো স্থানে শহীদদের জন্য স্মৃতিস্তম্ভ করাসহ বিভিন্ন দাবি জানিয়েছে ভুক্তভোগী পরিবারগুলো।

গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর মহাখালীর রাওয়া ক্লাবের অ্যাংকর হলে ‘পিলখানায় ৫৭ অফিসারসহ ৭৪ জনের হত্যার বিচার এবং শহীদ সেনা দিবস’-এর দাবিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরে দাবি জানানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে পিলখানায় শহীদ কর্নেল কুদরত ইলাহী রহমান শফিকের সন্তান অ্যাডভোকেট সাকিব রহমান বলেন, ‘প্রায় ১৬ বছর ধরে চলা বিডিআর কর্মকর্তাদের হত্যার মামলাটি আপিল ডিভিশনে থাকলেও সর্বশেষ পরিস্থিতি শহীদ পরিবারের সদস্যদের জানা নেই।

মামলা চলাকালীন এই দীর্ঘ সময়ে আমাদের সঙ্গে কোনো ধরনের যোগাযোগ করা হয়নি। আমরা যারা ভুক্তভোগী তারাই মামলার পরিস্থিতি জানি না, দেশের মানুষ কিভাবে জানবে?’

তিনি আরো বলেন, ‘বিডিআর হত্যাকাণ্ডের পর্দার আড়ালের ষড়যন্ত্রকারী তারা যারা গত সরকারের সময় ক্ষমতায় ছিল। আমাদের প্ল্যান অব অ্যাকশন হচ্ছে, আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে আমরা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ দাখিল করব। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রায় চার মাসেও আমাদের দেওয়ার জন্য পাঁচ মিনিট সময় হয়নি।

আমরা যেসব পরিবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার চাইতে যাচ্ছি সেসব শহীদ পরিবারকে আইন অনুসারে আশা করছি সরকার নিরাপত্তা দেবে। কারণ আমরা যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করব, তারা প্রভাবশালী।’

অ্যাডভোকেট সাকিব বলেন, ‘শেখ ফজলে নূর তাপস, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, জাহাঙ্গীর কবির নানক, মির্জা আজমের বিরুদ্ধে অভিযোগ করব। আন্তর্জাতিক আইনের ডকট্রিন অব কমান্ড রেসপন্সিবিলিটি অনুযায়ী শেখ হাসিনাকেও বিচারের মুখোমুখি করা সম্ভব। তৎকালীন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রধান হিসেবে তিনিও দায় এড়াতে পারেন না।

তার বিরুদ্ধেও আমরা অভিযোগ করব। এ ছাড়া তৎকালীন কিছু সেনা কর্মকর্তা, বিশেষ করে ডিজিএফআইয়ে যারা ছিলেন, তখন কয়েকজন সাংবাদিক যারা ভুল ন্যারেটিভ সৃষ্টি করেছেন তাদের বিরুদ্ধেও আমরা অভিযোগ আনব।’

তৎকালীন বিডিআরপ্রধান মেজর জেনারেল সাকিল আহমেদের ছেলে রাকীন আহমেদ ভূঁইয়া বলেন, ‘বিগত ফ্যাসিবাদ সরকার আওয়ামী লীগ চায়নি ওই হত্যাকাণ্ডে প্রকৃত অপরাধীদের বিচার হোক। কিন্তু যেহেতু এখন বাধা নেই, তাই বিডিআর সদস্য হত্যার তদন্ত দ্রুত শেষ করে জড়িতদের আইনের মাধ্যমে সাজা দেওয়া হোক।’

পিলখানা ট্র্যাজেডির দিনটিকে শহীদ দিবস ঘোষণা করার দাবি জানিয়ে রাকীন আরো বলেন, ‘যেসব সেনা কর্মকর্তা ওই হত্যাকাণ্ডের বিচার চেয়েছিলেন, তাদের চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। তাদের জন্যও সুনির্দিষ্ট একটি ব্যবস্থা করতে হবে।’

শহীদ পরিবারের পক্ষ থেকে দাবিগুলো তুলে ধরেন শহীদ কর্নেল মজিবুল হকের স্ত্রী নাহরীন ফেরদৌসী। তিনি বলেন, ‘সরকারি গেজেটের মাধ্যমে ২৫ ফেব্রুয়ারিকে শহীদ সেনা দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হোক। ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের আগেই ২৫ ফেব্রুয়ারিকে শহীদ সেনা দিবস ঘোষণা করে এদিন দেশজুড়ে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হোক।’

পিলখানা ট্র্যাজেডির ঘটনার সুষ্ঠু বিচারের স্বার্থে নতুনভাবে তদন্ত শুরুর দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রস্তাবিত তদন্ত কমিশন গঠনের অগ্রগতি আমাদের জানানো হোক। আগের সব তদন্তের প্রতিবেদন জনসমক্ষে প্রকাশ করা হোক। পিলখানা ট্র্যাজেডিকে উপযুক্তভাবে স্কুলের পাঠ্য বইয়ে অন্তর্ভুক্ত করা এবং দ্রুত বিচার শেষ করে আটক নির্দোষ সবার দ্রুত ন্যায়বিচার প্রাপ্তি নিশ্চিত করা হোক।’

শহীদ লেফটেন্যান্ট কর্নেল কাজী রবি রহমানের স্ত্রী ডা. ফৌজিয়া রশিদ কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, স্বৈরাচার সরকার পতনে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আমাদের সন্তানও অংশ নিয়েছিল। সে গুলিবিদ্ধ হয়। আমরা সবাই আন্দোলনে অংশ নিয়েছি। আমাদের অন্যতম একটি দাবি, ৫৭ জন শহীদ সেনা কর্মকর্তার নামে একেটি করে প্রতিষ্ঠানের নাম দেওয়া হোক। সশস্ত্র বাহিনী দিবসে আমাদের শহীদ পরিবারগুলোকে আমন্ত্রণ জানানো হয় না। এই অসম্মান যেন আর আমাদের সহ্য করতে না হয়।’

কাজী রবি রহমানের ভাই কাজী ওলি রহমান বলেন, “ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’-এর পরিকল্পনা ও অংশগ্রহণে এই ট্র্যাজেডি ঘটেছে।”

সংবাদ সম্মেলন সঞ্চালনা করেন শহীদ লেফটেন্যান্ট কর্নেল লুত্ফুর রহমান খানের মেয়ে ফাবলিহা বুশরা। তিনি বলেন, ‘আমরা আশা করেছিলাম বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার হয়েতো পিলখানা হত্যাকাণ্ডের মূল হোতাদের চিহ্নিত করে বিচার করবে। কিন্তু এখনো তা না হওয়ায় আবারও আমরা এই সংবাদ সম্মেলন করছি। পিলখানা হত্যাকাণ্ড কেবল আমাদের পরিবারগুলোর জন্য আঘাত নয়, এটা বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের প্রতি প্রথম আঘাত। দেশের সেনাবাহিনীর মনোবল ভেঙে দেওয়ার জন্য সুপরিকল্পিতভাবে ওই হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়।’

সংবাদ সম্মেলনে আরো বক্তব্য দেন শহীদ মেজর মাহবুবুর রহমানের স্ত্রী রিতা রহমান, শহীদ লেফটেন্যান্ট কর্নেল কাজী রবি রহমানের ভাই কাজী ওলি রহমান, শহীদ কর্নেল এরশাদের ভাই ডা. মামুন, শহীদ কর্নেল কুদরত এলাহির স্ত্রী লবী রহমান, শহীদ সুবেদার মেজর নুরুল ইসলামের ছেলে আশরাফুল আলম হান্নান প্রমুখ।
সূত্র:কালেরকন্ঠ

আইএনবি/বিভূঁইয়া