গাইবান্ধা প্রতিনিধি: গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে গত রবিবার (১৯ জুলাই) রাতে উপজেলার তারাপুর ইউনিয়নের লাটশালাচর গ্রামে ১২ বছরের এক কিশোরের সঙ্গে ১৪ বছরের কিশোরীর জোরপূর্বক বিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। বাল্যবিয়ের শিকার ওই দুই কিশোর-কিশোরী সম্পর্কে মামা-ভাগ্নি হয়। এমন বিরল এ ঘটনার জন্ম দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ইউপি সদস্য সামছুল হক ।
মামা-ভাগ্নির এমন বিয়ের ঘটনায় এলাকাজুড়ে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। জড়িতদের বিরুদ্ধে শাস্তির দাবি জানিয়েছে ভুক্তভোগীর পরিবার।
জানা গেছে, কয়েক দিন আগে উপজেলার লাটশালা গ্রামের আব্দুল কাদেরের ছেলে শামীম মিয়ার (১২) সঙ্গে একই গ্রামের কালু মণ্ডলের মেয়ে হাসিনা আক্তারের (১৪) অবৈধ প্রেমের সম্পর্কের অভিযোগ তোলে মেয়ের পরিবার। এমন অভিযোগে গত রবিবার দুপুরে কিশোর শামীমকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে আসে মেয়ের ভাই ও মামা। সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য সামছুল হকের নির্দেশে দেশীয় অস্ত্র হাতে ওই কিশোরকে তুলে আনেন মেয়ের পরিবারের লোকজন। এ সময় ছেলের বাবা বাধা দিতে গেলে তাকে মারধর ও বিভিন্ন হুমকি-ধমকি দেন তারা। এরপর ওই ছেলে বিয়েতে রাজি না হওয়ায় তাকেও মারধর করা হয় বলে জানা যায়। এমনকি ছেলের মা-বাবাকে মেরে ফেলার হুমকিও দেন তাঁরা।
পরে ওই রাতেই ইউপি সদস্যের উপস্থিতিতে এ বাল্যবিয়ে পড়ান সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের কাজী আব্দুল হাই। বিয়ে শেষে মেয়েকে ছেলের বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। আর এ ঘটনায় বাড়াবাড়ি না করতে শাসানো হয় ছেলের পরিবারকে। এমন ঘটনায় সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি পরিবার ও স্থানীয়দের।
ভুক্তভোগী পরিবারের অভিযোগ, এক সপ্তাহ আগে কোনো ঘটনা ছাড়াই হঠাৎ করে ছেলে-মেয়ের অবৈধ সম্পর্কের কুৎসা রটানো হয়। এরপর গত রবিবার রাতে মেয়ের ভাই সালাম ও তার এক মামাসহ কয়েকজন লোক বাড়িতে এসে আমার ছেলেকে তুলে নিয়ে যায়। সম্পর্কে মামা-ভাগ্নি হলেও তাদের জোর করে বিয়ে দেন মেম্বার ও মেয়ের পরিবার। অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে আমার ছেলেকে বিয়েতে রাজি করান ও রেজিস্ট্রারে সই নেন কাজী। আর আমরা এ বিষয়ে যদি কাউকে কিছু বলি তাহলে বিভিন্ন রকমের হুমকি দেওয়া হয়।
এ ব্যাপারে ছেলের বাবা আব্দুল কাদের বলেন, মেয়েটির মা আমার ভাগ্নি হয়, সেই সম্পর্কে সে আমার নাতনি। আমার ছেলের ও মেয়ের মামা-ভাগ্নির সম্পর্ক ছাড়া আর কিছুই ছিল না। কিন্তু মিথ্যা অপবাদ দিয়ে মেম্বারের হুকুমে আমার ছেলেকে তুলে নিয়ে গিয়ে জোর করে বিয়ে দেওয়া হয়েছে। আর কাজী আমাকে বলেন যে, উনি নাকি সাত-আট বছরের ছেলে-মেয়েদের বিয়ে দিতে পারেন।
বাল্যবিয়ের শিকার কিশোরী হাসিনা আক্তার বলেন, আমার সঙ্গে শামীমের কোনো প্রেমের সম্পর্ক ছিল না। মামা-ভাগ্নি হিসেবে আমরা কথা বলতাম। কিন্তু আমার বাড়ির লোকজন আমাকে মারপিট করে ওর সঙ্গে প্রেম আছে বলতে বলেছে। বিয়েতে রাজি হইনি এ জন্য সবাই আমাকে অনেক নির্যাতন করে।
কিশোর শামীম জানান, আমি কিছুই জানি না। হঠাৎ করে তারা এসে আমার গলায় বঁটি ধরে তুলে নিয়ে যায়। আর মারপিট করে বিয়েতে রাজি করায়।
এ ব্যাপারে তারাপুর ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য সামছুল হক সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমি কাউকে তুলে আনতে বলিনি। আর ছেলে ও মেয়ের পরিবারের সঙ্গে সমঝোতা করেই এ বিয়ে দেওয়া হয়েছে। বাল্যবিয়ে কেন দিলেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি তো আর কাগজ দেখিনি তাদের বয়স হয়েছে কী না।
তারাপুর ইউনিয়নের কাজী আব্দুল হাই বলেন, আমার কাছে কাগজ আছে, তারা প্রাপ্তবয়স্ক। তবে কী কাগজ আছে দেখতে চাইলে তিনি তা দেখাতে রাজি হননি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী লুতফুল হাসান বলেন, বাল্যবিয়ে দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এ বিষয়ে আমি শুনেছি। বিষয়টি তদন্ত করে কাজীসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আইএনবি/বি.ভূঁইয়া