চীনই পথ প্রদর্শক করোনাভাইরাস প্রতিরোধে

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ছড়িয়ে পড়ার মধ্যে পশ্চিমের দেশগুলোতে নতুন সংক্রমণের হার প্রতিদিন লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে দেখছে। তবে ভাইরাসটির উৎপত্তিস্থল চীনে নতুন করে সংক্রমণ অনেকটাই হ্রাস পেয়েছে।

চীনে এটি কিভাবে সম্ভব হল: যা উন্নত পশ্চিমা দেশগুলো কুলিয়ে উঠতে পারছে না।

এ সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্রের কক্স মিডিয়া গ্রুপ এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, চীন নতুন করে সংক্রামণ হ্রাস করতে পেরেছে। কারণ সে তার দেশের নাগরিকদের এ সম্পর্কে নির্দেশনা কঠোরভাবে মানতে বাধ্য করেছে। যে ভৌগলিক অঞ্চলে (উহান) এই রোগের উদ্ভব হয়েছিল বলে মনে করা হয়, সেখানে নাগরিকদের বাকি দেশের অঞ্চল থেকে এক প্রকার বিচ্ছিন্ন করেই রেখেছিল চীন সরকার।

উহান শহরকে বিচ্ছিন্ন করা ছাড়াও, চীন সরকার তার সব নাগরিকদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করেছে। এমনকি যারা এই রোগে আক্রান্ত না তাদেরকেও বার বার পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে। সংক্রামণ রোগীকে খুঁজে বের করতে হাজার হাজার দল গঠন করা হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, করোনার নিয়ে চীন যেভাবে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে তা অন্য দেশগুলোর অনুসরণ করা উচিত।

আগ্রাসী পদক্ষেপ:

চীনের কিছু কিছু অঞ্চলে করোনাভাইরাসের সংক্রামণের সংখ্যা হ্রাসের সংবাদ নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করলেও, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা দ্বারা পরিচালিত একটি চিকিৎসা গবেষণা দল ফেব্রুয়ারিতে সেখানে ভ্রমণকারীদের প্রতিরোধে চীনা সরকারের উদ্যোগের প্রশংসা করে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

২৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বিদেশি ১৩ জন বিজ্ঞানী এবং ১২ জন চীনা বিজ্ঞানী অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। তারা সেখানে থাকা অবস্থায়ই নতুন সংক্রামণের সংখ্যা হ্রাস পেয়েছিল।

সমীক্ষা অনুসারে, ১০ ফেব্রুয়ারি, দলটি প্রথম দিনে নতুন ২৪৭৮টি সংক্রামণ চিহ্নিত করার তথ্য পায়। দলটি দুই সপ্তাহ পরে চলে যাওয়ার সময়, সংক্রামণের সংখ্যা ৪০৯ নেমে আসতে দেখে।

এই দলেন নেতা ব্রুস আইলওয়ার্ড নতুন সংখ্যা হ্রাসের জন্য চীনে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করেছেন।

ব্রুস আইলওয়ার্ড গত সপ্তাহে জেনেভায় সাংবাদিকদের বলেন, ‘এই আগ্রাসী প্রতিক্রিয়ার কারণে চীনে নতুন করে হাজারো মানুষকে এ সংক্রামণ থেকে দূরে রাখা গেছে’।

তিনি আরো বলেন, করোনাভাইরাসের দ্রুত বিস্তার রোধ করতে চীনের সাহসী দৃষ্টিভঙ্গিই এই দ্রুত বর্ধনশীল ও মারাত্মক মহামারীটির পথ পরিবর্তন করেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় অ্যালার্জি ও সংক্রামক রোগের পরিচালক ডা. অ্যান্টনি ফৌসি এই পদক্ষেপগুলিকে অবশ্য ‘দুর্দশাগ্রস্ত’ বলে বর্ণনা করেছেন। যদিও তিনি বলেন, চীনারা নতুন সংক্রামণের সংখ্যা হ্রাসে সফল হয়েছেন।

এদিকে হোয়াইট হাউস করোনভাইরাস টাস্ক ফোর্সের সদস্য এন্টোনি ফৌসি বলেন, ‘চীনের প্রচেষ্টা এতটাই কঠোর হয়েছে যা আমরা যুক্তরাষ্ট্রে কখনই করতে পারব না। তবে এরপরেও অনেক কিছু রয়েছে যার অনিচ্ছাকৃত নেতিবাচক পরিণতি হয়েছে। আমি মনে করি চীন করোনাভাইরাসের একটি বিস্তৃত বিস্তার রোধ করেছে’।

বাধ্যতামূলক পৃথকীকরণ বা কোয়ারেন্টাইন:

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদনে দেখা গেছে, চীন কর্তৃক গৃহীত নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলি ভাইরাসের বিরুদ্ধে সবচেয়ে কার্যকর হিসাবে প্রমাণিত হয়েছে।

-২৩ শে জানুয়ারির পর থেকে কমপক্ষে ৫০ কোটি মানুষকে বাধ্যতামূলক পৃথকীকরণের অধীনে রেখেছে চীন। হুবেই প্রদেশের উহান শহর এবং আশেপাশের শহরগুলোকে বন্ধ করে দিয়েছে।
-হুবেই প্রদেশের নিকটবর্তী অঞ্চলের কেউ অসুস্থ বোধ করলে তবে নিজেকে আলাদা করে রাখতে বলেছে সরকার।
-আশেপাশের লোকদের স্ব-বিচ্ছিন্নতার গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করতে বলেছে।
-তাদের জন্য আর্থিক প্রণোদনা প্রদান করেছে।
-যারা কোয়ারেন্টাইনের আওতায় থাকবেন তারা কেউ বাড়িঘর ছেড়ে বের হলে আইন লঙ্ঘন করা হবে বলে সবাইকে অবহিত করা হয়েছে।
-উহানে প্রায় এক সপ্তাহের মধ্যে দুটি হাসপাতাল নির্মাণ করেছে চীন।
-অসুস্থদের যত্ন নেওয়ার জন্য হুবাই থেকে দেশজুড়ে স্বাস্থ্যসেবা কর্মী পাঠিয়েছে।
-ভাইরাস আক্রান্ত রোগীদের শনাক্ত করতে ১৮০০টি দল চালু করেছে।
-সারা দেশে “সামাজিক দূরত্ব” ব্যবস্থা বাস্তবায়িত হয়েছে। যার মধ্যে স্কুল, ব্যবসা ও থিয়েটার বন্ধ করা এবং ক্রীড়া ইভেন্ট বাতিল করা হয়েছে।
-বাইরে গেলে মাস্ক ব্যবহার করা।

এগুলো ছাড়াও আলিপে এবং উইচ্যাট দুটি মোবাইল ফোন অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করে নাগরিকদের চলাফেরার উপর নজরদারি চালিয়েছে চীন।

আইএনবি/বিভূঁইয়া