আইএনবি নিউজ: বিশ্বে মহামারী (‘কোভিড-১৯’) রূপ নেয়ায় দেশের কারাগারগুলোতে বিশেষ সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। গত ১০ মার্চ কারা মহাপরিদর্শকের পক্ষে অতিরিক্ত কারা মহাপরিদর্শক কর্নেল আবরার হোসেন এ সংক্রান্ত জরুরি নির্দেশনা জারি করেছেন।
দেশের সব কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার, জেলার এবং সংশ্লিষ্ট রেঞ্জের কারা উপমহাপরিদর্শকদের কাছে এ সংক্রান্ত নির্দেশনা ই-মেইলে পাঠানো হয়েছে। অনুলিপি দেয়া হয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিবকেও। নির্দেশনায় কারাগারে আসা নতুন বন্দিদের অন্তত ১৪ দিন পর্যবেক্ষণে রাখতে বলা হয়েছে।
কথা হয় কারা অধিদফতরের অতিরিক্ত আইজি কর্নেল আবরার হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ভাইরাসটি প্রতিরোধে সব উদ্যোগ নিয়েছি। শুরুতে মন্ত্রণালয় থেকে যেসব নির্দেশনা এসেছিল সেগুলো তাৎক্ষণিকভাবে কারাগারগুলোতে পাঠিয়েছি। পরে মনে হয়েছে, আরও অনেক কিছু করার আছে। ফলে ডাক্তার হিসেবে আমি করোনার বিস্তার রোধে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরে প্রতিবেদন তৈরি করি। তার সঙ্গে কিছু ছবি সংযুক্ত করে কারাগারগুলোতে পাঠাই। এগুলো যথাযথভাবে পালন করা হচ্ছে কি না তা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট ডিআইজি, জেল সুপার এবং জেলারদের সঙ্গে কথা বলেছি। এ পর্যন্ত তিন দফা লিখিত নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সবশেষ নির্দেশনা পাঠাই গত ১০ মার্চ।
এক প্রশ্নে কর্নেল আবরার হোসেন বলেন, কারাগারগুলোতে কোনো থার্মাল স্ক্যানার নেই। থার্মাল স্ক্যানার ক্রয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমতি চেয়েছি, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছি। ইনফ্রারেড টেম্পারেচার রিডার (শরীরে টাচ না করেই তাপমাত্রা মাপার যন্ত্র) কেনার প্রক্রিয়া চলছে।
নতুন বন্দিদের আমদানি ওয়ার্ড এবং সাধারণ ওয়ার্ডে স্থানান্তরের আগে একটি বাফার বা অন্তর্বর্তীকালীন আমদানি ওয়ার্ডে ১৪ দিন পর্যবেক্ষণে রাখতে বলা হয়েছে নির্দেশনায়। এই সময়ে কোনো লক্ষণ প্রকাশ না পেলে তাদের সাধারণ ওয়ার্ডে নিতে বলা হয়েছে। পর্যবেক্ষণকালে পুরনো বন্দিরা যাতে নতুন বন্দিদের সংস্পর্শে আসতে না পারে সেদিকে বিশেষভাবে লক্ষ্য রাখতে বলা হয়েছে।
সতর্কবার্তায় বলা হয়েছে, কারাগারগুলোতে প্রতিদিন অনেক লোকের সমাগম হয়। ফলে প্রত্যেক কারাগারের মূল ফটকে সাবান, হ্যান্ডওয়াশ বা হ্যান্ড স্যানিটাইজার প্রস্তুত রাখতে হবে। কারারক্ষীরা ডিউটিতে যাওয়ার সময় এবং আদালত থেকে আসা বন্দি ও নতুন বন্দিদের কারাগারে প্রবেশের আগে অন্তত ২০ সেকেন্ড হাত-মুখ ধোয়া নিশ্চিত করতে হবে। কোনো দর্শনার্থীর মধ্যে করোনার লক্ষণ দেখা গেলে তিনি যেন কারা এলাকায় প্রবেশ করতে না পারেন তা সৌজন্যের সঙ্গে নিশ্চিত করতে হবে।
কারা ফটকে শরীরের তাপমাত্রা মাপার ব্যবস্থা (সম্ভব হলে ইনফ্রারেড থার্মোমিটর) রাখা এবং বন্দি বা কারারক্ষীদের তাপমাত্রা পরিমাপ করে সুস্থতা সম্পর্কে নিশ্চিত হতে বলা হয়েছে। কারও সুস্থতা নিয়ে সংশয় দেখা দিলে তাকে তাৎক্ষণিকভাবে পৃথক করার ব্যবস্থা নিয়ে প্রয়োজনে জাতীয় হটলাইনে যোগাযোগ করতে হবে।
কারাফটক, সাক্ষাৎকক্ষ, দর্শনার্থীদের অপেক্ষাগার ও ডিউটি বণ্টন রুমের সামনে দর্শনযোগ্য স্থানে করোনাভাইরাস শনাক্তকরণ সংক্রান্ত জাতীয় হট লাইন নম্বরসমূহ প্রদর্শনের নির্দেশ দিয়ে কারা কর্তৃপক্ষের পরিপত্রে বন্দিদের জন্য ভিটামিন ‘সি’-এর দৈনিক চাহিদা পূরণ করা, রন্ধনশালায় সর্বোচ্চ পরিচ্ছন্নতা, খাদ্যসামগ্রী পর্যাপ্ত সিদ্ধ করার দিকটি নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে।
এছাড়া খাবারের পুষ্টিগত মান নিশ্চিত করা, সন্দেহভাজন কোনো বন্দির জামিননামা কারাগারে এলে মুক্তি দেয়ার আগে স্থানীয় সিভিল সার্জনকে অবগত করা ও তার নির্দেশনা অনুযায়ীই বন্দি মুক্তির ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলা হয়েছে। এ সংক্রান্ত বন্দির বিষয়টি সংশ্লিষ্ট রেঞ্জের কারা উপ-মহাপরিদর্শকদের অবগত করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
ময়মনসিংহ রেঞ্জের ডিআইজি (প্রিজন্স) জাহাঙ্গীর কবির বলেন, করোনার বিস্তার রোধে কারা অধিদফতর থেকে যেসব নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে তা শতভাগ পালন করা হচ্ছে। ১০ মার্চের নির্দেশনা এরই মধ্যে বাস্তবায়ন শুরু হয়ে গেছে। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার মাহবুবুল ইসলামও একই ধরনের তথ্য দিয়েছেন।
যুগান্তর
আইএনবি/বিভূঁইয়া