মোহাম্মদ জামাল মল্লিক, শরীয়তপুর।।
বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়া প্রাণঘাতি করোনাভাইরাস নিস্তব্ধ ও অচল করে দিয়েছে গোটা বিশ্ব। তারই ছোবলে আজ আতঙ্কে গৃহবন্দি বাংলাদেশের মানুষ। ইট পাথরের বৃহদাকার রাস্তাগুলো আজ যানবাহন ও জনমানবশূন্য। সবকিছুই যেন প্রাণহীন। বৈশ্বিক মহামারিতে রূপ নেয়া মরণঘাতি করোনা ভাইরাস সংক্রমনে ও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা চষে বেড়াচ্ছেন শরীয়তপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মাহাবুর রহমান শেখ।
সংকোচে কাউকে বলতে পারছেন না তাদেরকে বিশেষ খাদ্য সহায়তা প্রদান করছেন। উপজেলাবাসীর মাঝে সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি করতে কখনও মানুষকে লাইনে দাঁড় করিয়ে, আবার কখনও নিজ দায়িত্বে মানুষের বাড়ির দরজায় গিয়ে গিয়ে খাবার পৌঁছে দিচ্ছেন
উপজেলায় বহিরাগত প্রবেশ বন্ধ করতে জেলা প্রশাসক কাজী আবু তাহের এর নেতৃত্বে সরকারী নিদের্শনা মেনে উপজেলাকে লকডাউন ঘোষনা করেছেন। উপজেলার গুরুত্বপূর্ন স্থানে চেকপোষ্ট বসিয়ে নিরাপত্তা জোরদার করেছেন তিনি। লকডাউন ঘোষনার পূর্বেই বিভিন্ন জেলা থেকে আগত ব্যক্তিদের যত্রতত্র জায়গায় ঘোরাফেরা না করে হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার নির্দেশনা দেন এবং তা বাস্তবায়ন করেন।
উপজেলার পাশ্ববর্তী পশ্চিমে মাদারীপুর সদর ও শিবচর, দক্ষিনে ডামুড্যা ও কালকিনি , উত্তরে জাজিরা ও নড়িয়া, উপজেলায় করোনা আক্রান্ত রয়েছে। বহিরাগত প্রবেশ করায় শরীয়তপুর সদর উপজেলায় এখন পর্যন্ত ৩ জন আক্রান্ত রয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন তথ্যের ভিত্তিতে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ এবং হোম কোয়ারেন্টাইন আইন অমান্যকারী ব্যক্তিদের সতর্কতামূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। এছাড়া নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য সামগ্রীর মূল্য বৃদ্ধি না করতে ব্যবসায়ীদের কঠোর নিদের্শনা প্রদান করেন তিনি।
সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত এমন কার্যক্রম অব্যাহত রাখছেন তিনি। তারপরও আবার দেখা যায় গভীর রাতেও সরকারী বার্তা, জনসচেতনামূলক পরামর্শ প্রদান করছে তিনি। সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে উপজেলার পালং বাজারের মাছ, মাংস ও কাচা তরকারির দোকান মেইন সড়কে বসানোর ব্যবস্থা করেছেন তিনি। উপজেলার বিভিন্ন বাজারের দোকান পাট বন্ধ, গ্রামের চা দোকানে জনসমাগম এড়িয়ে চলা নিরোধ করে প্রশংসীয় ভূমিকা পালন করেন। কোথাও কোনো সমাগম বা চা দোকান খোলার খবর পেলেই ছুটে যান সেখানে।
সামাজিক দুরত্ব নিশ্চিত করে শরীয়তপুর জেলা প্রশাসক কাজী আবু তাহের এর পরামর্শ ও নির্দেশনায় ইউএনও”র উদ্যোগে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ উপহার ও জেলা প্রশাসকের ত্রান তহবিলে বেসরকারি ব্যক্তি, সংস্থা, প্রতিষ্ঠান হতে প্রাপ্ত অনুদান হতে খাদ্য সামগ্রী ফোন পেলেই পৌঁছে দিচ্ছিন উপজেলা মধ্যবিত্ত, নিম্ন-মধ্যবিত্ত ও দরিদ্র পরিবার যাদের ঘরে এই মুহুর্তে খাবার নেই। কিন্তু সংকোচে কাউকে বলতে পারছেন না তাদেরকে বিশেষ খাদ্য সহায়তা প্রদান করছেন। আবার কখনও নিজ দায়িত্বে মানুষের বাড়ির দরজায় গিয়ে গিয়ে খাবার পৌঁছে দিচ্ছেন তিনি।
শরীয়তপুর সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মাহাবুর রহমান শেখ এর নেতৃত্বে গঠিত হটলাইনে ০১৭১৮-৪১৯০৩৮ বা ৩৩৩ নাম্বারে ফোন দিলেই মধ্যবিত্ত, নিম্ন-মধ্যবিত্ত ও দরিদ্র পরিবারকে খাদ্য সহায়তা প্যাকেজ উপজেলার সরকারী কর্মকর্তাদের তত্তাবধানে যাচাই-বাচাই করে পরিচয় গোপন রেখে পৌছে দেয়া হচ্ছে বাড়ি। করোনাভাইরাস জনিত উদ্ভূত পরিস্থিতির কারণে কর্মহীন মানুষের খাদ্য সমস্যায় সহায়তা হিসেবে উপজেলাবাসীকে সরকারিভাবে চাল ও নগদ অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। বরাদ্দের বিষয়ে জনগণ ও সরকারের মধ্যে যাতে কোন ভুল বোঝাবুঝি না হয় সেজন্য শুদ্ধাচারের অংশ হিসেবে জনগণের নিকট সঠিক জবাবদিহিতা বজায় রাখতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তা তুলে ধরছেন জেলা প্রশাসক ।
শরীয়তপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহাবুর রহমান শেখ বলেন, করোনাভাইরাস নিয়ে সাধারণ মানুষ খুবই আতংকিত। শরীয়তপুর সদর উপজেলাসহ প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে ভ্যানচালক, রিক্সাচালক, শ্রমিক, খেটে খাওয়া মানুষ, ভিক্ষুক, অতি ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের মাঝে ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছে দিচ্ছি। আমাদের বাড়ি বাড়ি খাদ্য বিতরণ কাজে সার্বিক সহযোগিতা করছেন বিডিক্লিন নামে একটি স্বেচ্ছাসেবক সংগঠন।
তিনি আরও বলেন, শরীয়তপুর সদর উপজেলাবাসীকে ভালো রাখতে, নিরাপদে রাখতে আমরা সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। এখন পর্যন্ত উপজেলায় একই পরিবারের তিন জন ব্যক্তি করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। তারা নারায়ণগঞ্জ থেকে এসেছিলো। তবে উপজেলাবাসী যদি আমাদের আন্তরিক ভাবে সহযোগিতা না করেন তাহলে সব চেষ্টা, কাজ বৃথা হয়ে যাবে। পাশাপাশি সকল ধরণের অভিযান অব্যাহত রেখেছি। শনিবার থেকে পবিত্র মাহে রমজান শুরু হয়েছে। সেদিকেও আমাদের নজর আছে। নিয়মিত বাজার মনিটরিং অব্যাহত থাকবে।