আইএনবি নিউজ: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ধর্ষনের ঘটনায় জড়িতকে গ্রেপ্তারের খুব কাছাকাছি পর্যায়ে রয়েছে আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। এ ঘটনায় আশপাশের ফুটেজ থেকে তারা ইতোমধ্যে ধর্ষককে সনাক্ত করেছেন। বিষয়টি আরো নিশ্চিত হতে নির্যাতিতা নারীকে সন্দেহভাজন ওই ধর্ষকের ছবি দেখানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। পাশাপাশি তার দেওয়া বর্ননামতে ধর্ষকের চেহারার একটি সম্ভব্য স্ক্রেচও আঁকা হয়েছে। সে অনুযায়ি অভিযান চালানো হচ্ছে বলে তদন্ত তদারক সূত্রে জানা গেছে।
তবে নির্ভরযোগ্য একটি সূত্রের দাবী, ইতোমধ্যে ওই ধর্ষককে পুলিশের একটি ইউনিট তাদের হেফাজতে নিয়েছেন। এ ঘটনার পেছনে অন্য কারো ইন্ধন ছিলো কিনা সে সম্পর্কে তার কাছ থেকে জানার চেষ্টা চলছে। আজ অথবা কাল সকালে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হতে পারে বলে সূত্রটি দাবী করেছে। তবে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
এদিকে নির্যাতিতা ওই নারীর শারিরিক অবস্থার উন্নতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম নাসির উদ্দিন। দু-একদিনের মধ্যে তাকে ছাড়পত্র দেওয়া হবে বলেও তিনি জানান।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে র্যাব-১ এর কমান্ডিং অফিসার লে.কর্ণেল সাফিউল্লাহ বুলবুল জানান, ‘ঢাবি ছাত্রি ধর্ষনের ঘটনার ছায়া তদন্ত করছে র্যাব। আমরা জড়িতকে গ্রেফতারে খুব কাছাকাছি পর্যায়ে রয়েছি। আশা করা যাচ্ছে দ্রুতই ভালো সংবাদ দেওয়া সম্ভব হবে।’
গত রোববার (৫ জানুয়ারি) বিকাল সাড়ে ৫টার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে করে ওই ছাত্রী বান্ধবীর বাসায় যাচ্ছিলেন। কুর্মিটোলা বাসস্টেশনে নামার পর তাকে অজ্ঞাত এক ব্যক্তি অনুসরণ করতে থাকে। পরে তাকে ধরে রাস্তার পাশে নির্জন স্থানে নিয়ে ধর্ষণ করা হয়। ঘটনাটি সন্ধ্যা ৭টা থেকে ৮টার মধ্যে ঘটে। এ ঘটনার পর জ্ঞান হারান ওই ছাত্রী। এরপর রাত ১০টার দিকে জ্ঞান ফিরলে তিনি রিকশায় যোগে বান্ধবীর বাসায় যান। সেখান থেকে বান্ধবীসহ অন্য সহপাঠীরা তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। এ ঘটনায় ছাত্রীর বাবা বাদী হয়ে ক্যান্টনমেন্ট থানায় একটি মামলা করেন। ওই মামলার তদন্তভার ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশে ন্যস্ত করা হয়। পাশাপাশি মামলার ছায়া তদন্ত করছে র্যাব।
তদন্ত তদারক সূত্রে জানা গেছে, ভুল স্টপেজে নামার পর ফুটপাত ধরে হাটছিলেন ওই ছাত্রী। এসময় তাকে অনুসরণ করছিলো এক ব্যাক্তি। কুর্মিটোলা হাসপাতালের সামনের একটি ওষুধের দোকান ও পাশের একটি রেস্টুরেন্টে থেকে পাওয়া ফুটেজে এ ধরণের কিছু দৃশ্য দেখা গেছে। তবে তাও অস্পষ্ট। ওই ফুটেজ পাওয়ার পর সন্দেহভাজনকে গ্রেফতারে মাঠে নামে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। সোমবার গভির রাতে তাদের আনুষ্ঠানিকভাবে মামলার তদন্তভার দেওয়া হয়। যদিও ঘটনার পর থেকেই তারা এ বিষয়ে ছায়া তদন্ত শুরু করেছিলো।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার মশিউর রহমান যায়যায়দিনকে বলেন, মামলা তদন্তভার পাওয়ার আগে থেকেই ডিবি ধর্ষককে গ্রেফতারে মাঠে নামে। আশা করা যাচ্ছে দ্রুতই আমরা তাকে গ্রেফতার করতে পারবো।
সংশ্লিষ্ট সূত্র দাবী করে, ডিবি পুলিশের পাশাপাশি এ ঘটনার ছায়া তদন্ত করছিলো র্যাব। তারা ঘটনাস্থলের আসপাশ থেকে বেশ কয়েকজনকে আটক করে। এরপর মঙ্গলবার বিকেলে গোয়েন্দা পুলিশের কাছ থেকে ভিডিও ফুটেজ নিয়ে যাওয়া হয় র্যাবের পক্ষ থেকে। ওই ফুটেজ দেখে প্রাথমিকভাবে একজনকে সনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে। যদিও এ বিষয়টি স্বীকার করেনি র্যাব।
জানতে চাইলে র্যাবের আইন-গনমাধ্যেম ও গোয়েন্দা শাখার পরিচালক লে. কর্ণেল সারোয়ার বিন কাশেমবলেন, আমরা ধর্ষককে গ্রেফতারে ছুটে চলেছি। এখনও বলার মত কোন পর্যায় তৈরী হয়নি। আমরা একজনকে ডেকেছিলাম কিছু তথ্য নেওয়া জন্য। কিন্তু তার কাছ থেকে তেমন কিছুই পাওয়া যায়নি। আমরা ধর্ষককে অবশ্যই জনসম্মুক্ষে আনতে চাই। তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে যেন কোন ভুল না হয় সেদিকে খেয়াল রাখা হচ্ছে।
জানা গেছে, ফুটপাত ধরে হাঁটা শিক্ষার্থী কোনও কিছু বুঝে ওঠার আগেই তাকে টেনে হিঁচড়ে ঝোঁপের আড়ালে নিয়ে যায় ধর্ষক। চিৎকার চেঁচামেচি এবং ধস্তাধস্তি করেও ওই শিক্ষার্থী নিজেকে রক্ষা করতে পারেননি। কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের প্রধান ফটক থেকে একশ’ গজ সামনে এগোনোর পরপরইএ ঘটনা ঘটে।
সরজমিনে দেখা গেছে, ঘটনাস্থলের আসপাশের এলাকায় সন্ধ্যার পর থেকেই ভাষমান পতিতারা ভিড় করেন। পাশাপাশি তারা ঝোপের মাধ্যে অস্থায়ি ঝুপড়িও তৈরী করেছেন। সেখানে সন্ধ্যার পর থেকে মাদকসেবীরা ভিড় করেন। ধারনা করা হচ্ছে মাদকসেবী কোন ব্যাক্তি এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত। এ কারনে ওই এলাকায় আগতদের সম্পর্কে ধারণা পেতে কয়েকজনকে র্যাব কার্যালয়ে ডেকে পাঠানো হয়। সেখান থেকে ধারণা পাওয়ার পর কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। সেখান থেকে কিছু তথ্য পাওয়ার পর সন্দেহভাজনকে গ্রেফতারে মাঠে নামে র্যাব।
তদন্ত তদারক কর্মকর্তাদের দেওয়া তথ্যমতে, ঘটনাস্থল থেকে ১৫ ধরনের আলামত সংগ্রহ করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) এর ক্রাইম সিন ইউনিট। আলামতের মধ্যে রয়েছে, শিক্ষার্থীর ইনহেলার, ওষুধ, একজোড়া পায়ের স্যান্ডেল, দুটি চাবির রিং, একটি ফাইল, হাতঘড়ি, বই, কাগজপপত্র, জিন্সের প্যান্ট ও পরিধেয় পোশাক ইত্যাদি। এসব আলামতের ফরেনসিক পরীক্ষা করলে ধর্ষকের সম্পর্কে একটার ধারণা পাওয়া সম্ভব হবে বলে জানা গেছে। মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়ার জন্যও ফরেনসিক রিপোর্ট গুরুত্বপূর্ণ।
ডিএমপির গুলশান বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) সুদীপ চক্রবর্তী জানান, আমরা ভিকটিমের সঙ্গে কথা বলেছি। সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে মামলা তদন্ত করা হচ্ছে। প্রযুক্তির সহায়তার পাশাপাশি সোর্স নিয়োগ করা হয়েছে। নির্যাতিতা নারী মানুষিকভাবে অনেক শক্ত। তিনি আমাদের সর্বচ্চো সহায়তা করছেন।
দু-একদিনের মধ্যে ছাড়পত্র
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে চিকিৎসাধীন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী দুই-একদিনের মধ্যেই বাড়ি যাওয়ার জন্য ছাড়পত্র পেতে পারেন বলে জানিয়েছেন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম নাসির উদ্দিন।
তিনি বলেন, সোমবার, ৬ আমরা সাত সদস্যের একটি মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করেছি। ফাইনালি তারা শারীরিক অবস্থার মধ্যে ট্রমা পাওয়া যায়নি। উনি মানসিকভাবে যথেষ্ট ডিপ্রেসিভ ছিলেন। আমাদের মনোচিকিৎসক আছেন, উনি কিছু ম্যানেজমেন্ট দিয়েছেন। ওই শিক্ষার্থী গতকাল থেকে স্বাভাবিকতার দিকে আগাচ্ছেন এবং তার মানসিক শক্তি ধীরে ধীরে বাড়ছে। আশা করছি, চিকিৎসক পরামর্শ দিলে আমরা দুই-একদিনের ভেতরে তাকে ছাড়পত্র দিতে পারবো। তবে তার সর্বোপরি অবস্থা উন্নতির দিকে।
আইএনবি/ এনএম