কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি: কুড়িগ্রামের রাজারহাটে ফের ব্যবহার হচ্ছে নিষিদ্ধ পলিথিন। স্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর পলিথিন ব্যাগের উৎপাদন, ব্যবহার, বিপণন ও বাজারজাতকরণে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও ফের এই ব্যাগের অবাধ ব্যবহার হচ্ছে। এমন কোন দোকান পাওয়া দুস্কর,যেখানে পলিথিন ব্যাগের ব্যবহার নেই। প্রকাশ্যে এখন এর ব্যবহার চলছে দেদারছে। সহজলভ্য ও ব্যবহারে সুবিধা, তাই ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়ই অভ্যস্থ এটি ব্যবহার করতে।
সরেজমিনে দেখা যায়, মাছ কেনার পর মাছ বিক্রতা পলিথিন দিচ্ছে। তরকারি কিনছে সেটিতেও পলিথিন ব্যাগ, আলু কিনছে সেখানেও পলিথিন। পলিথিন ছাড়া কোথাও কোনো উপায় নেই। ফলের দোকান, রেস্টুরেন্ট, মুদির দোকান,ওষুধের দোকান থেকে শুরু করে বাজারের প্রায় সব দোকানে পণ্য বহনে ব্যবহ্নত হচ্ছে নিষিদ্ধ পলিথিন ব্যাগ। এমনকি প্রশাসনের লোকেরাও প্রকাশ্যে ব্যবহার করছে নিষিদ্ধ পলিথিন ব্যাগ। র্সবত্রই নিষিদ্ধ পলিথিনের ছোট-বড় ব্যাগের ছড়াছড়ি রাজারহাট উপজেলাজুড়ে। পলিথিনের ব্যবহার পুরোপুরি নিষিদ্ধ থাকার পরও কেবল রাজারহাট বাজারে নয় উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের ছোট-বড় সব ধরনের দোকানে এর ব্যবহার হচ্ছে দেদারছে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (পবা) সুত্রে জানা যায়, শুধু রাজারহাট উপজেলায় প্রতিমাসে ব্যবহার হচ্ছে প্রায় ১ লাখ ৩০ হাজার পিস পলিথিন ব্যাগ। উপজেলাজুড়ে তা ছড়িয়ে পড়ছে মহামারি আকারে। তবে আগে পলিথিন ব্যাগে হাতল ছিল না, এখন হাতল এবং হাতল ছাড়া পলিথিন ব্যাগ ব্যবহার করা হচ্ছে। আর প্রকাশ্যেই আইন ভঙ্গ করে পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যকে হুমকির মুখে ঠেলে দেয়া হচ্ছে।
বাজারজাতকরণের মাধ্যমে দোকানদার হয়ে সাধারণ মানুষের হাতে পৌঁছে,ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ দিয়ে তৈরি পলিথিন নষ্ট করছে পরিবেশ। নিষিদ্ধ পলিথিনের ব্যবহার বন্ধ না হওয়ার জন্য আইনের প্রতি মানুষের শ্রদ্ধা না থাকা, সরকারের সদিচ্ছা ও রাজনৈতিক অঙ্গীকারের অভাবকে দায়ী করা হচ্ছে। সবচেয়ে বড় বিষয় হলো পরিবেশ। পরিবেশ ক্ষতির সম্মুখীন হলে আমাদের অস্তিত্ব বিপন্ন হবে। কাজেই পরিবেশ রক্ষায় আমাদেরকে অব্যশই দায়িত্ব নিতে হবে। সেজন্য পলিথিন ব্যবহার বন্ধে বিদ্যমান আইন কঠোরভাবে প্রয়োগ করা এবং পলিথিন উৎপাদন বিপণনকারী অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।
পলিথিনের বিকল্প হিসেবে পাটের ব্যাগ,কাপড়ের ব্যাগ,কাগজের ব্যাগ ও ঠোংগা ইত্যাদি সহজলভ্য এবং এগুলো ব্যবহারে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। নিষিদ্ধ পলিথিন ব্যবহার বন্ধে আইন প্রয়োগের পাশাপাশি জনসচেতনতা প্রয়োজন। পলিথিনের ব্যবহার বন্ধে রাজারহাট উপজেলায় ক্যাম্পেইন, মাইকিং, পোস্টার, লিফলেট বিতরণ করতে হবে এবং ছোট-বড় সব ধরনের দোকানে অভিযান পরিচালনাসহ শপিংমল থেকে ফুটপাতের অস্থায়ী দোকানসহ সর্বত্র যাদের কাছে পলিথিন পাওয়া যাবে সকলকে জরিমানার আওতায় নিয়ে এলে হয়তো এর ব্যবহার কমবে।
পরিবেশ সংরক্ষণ আইন(সংশোধিত) ২০০২ অনুযায়ী এ আইন অমান্য করলে ১০ বছরের সশ্রম কারাদন্ড ও ১০ লাখ টাকা জরিমানা করার বিধান রয়েছে। আর বাজারজাত করলে ৬ মাসের জেল ও ১০ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে। কিন্তু বর্তমানে বাজারগুলোতে প্রকাশ্যে পলিথিন ব্যবহার করা হলেও এ আইনের কোন প্রয়োগ নেই এবং এ বিষয়ে প্রশাসনের তেমন কোন মাথা ব্যথা নেই। তাই খুব শিগগিরই উপজেলা থেকে পলিথিনসহ সব ধরনের নিষিদ্ধ পণ্য ব্যবহার ও বিক্রিয় বন্ধ করতে রাজারহাট উপজেলা প্রশাসনসহ উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন উপজেলাবাসী।
আইএনবি/বিভূঁইয়া