‘পতাকা হাতে দাঁড়িয়ে ছিল তামিম, গুলিতে লুটিয়ে পড়ে মাটিতে’

নরসিংদী প্রতিনিধি: নরসিংদী শহরের জেলখানা মোড়ে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন চলছিল ‘১৮ জুলাই । সে সময় তাহমিদ ভূঁইয়া তামিম হাতে পতাকা নিয়ে আমাদের সঙ্গে দাঁড়িয়ে ছিল। হঠাৎ চারদিক থেকে গুলিবর্ষণ শুরু হয়। কোন ফাঁকে তার শরীরে গুলি লাগে সেটা লক্ষ্য করিনি। তামিম যখন মাটিতে লুটিয়ে পড়ে তখন দেখি, তার পেট ও বুক দিয়ে রক্ত ঝরছে। দ্রুত তাকে উদ্ধার করে জেলা হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। পরে তার লাশ আন্দোলনস্থলে নিয়ে আসা হয়। লাশ সামনে রেখে স্লোগান দিতে থাকেন আন্দোলনকারীরা। এ সময় আবার গুলিবর্ষণ শুরু হলে তামিমের লাশেও গুলি লাগে।’ – ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী শিহাবসহ আন্দোলনে অংশ নেওয়া একাধিক শিক্ষার্থী এই তথ্য জানান।

জানা যায়, নিহত তাহমিদ ভূঁইয়া তামিম নাছিমা কাদির মোল্লা হাইস্কুল অ্যান্ড হোমসের শিক্ষার্থী ছিল। পল্লীচিকিৎসক বাবা ও গৃহিণী মায়ের তিন সন্তানের মধ্যে সে সবার বড় ছিল। তামিমের ১৩ ও ৩ বছর বয়সী দুটি বোন রয়েছে।

তামিমের বাবা রফিবুল ইসলাম বলেন, ‘ঘটনার দিন দুপুরে পরিবারের সবাই একসঙ্গে খাওয়া-দাওয়া করি। হঠাৎ তামিম বাসা থেকে বের হয়ে যায়। পরে ওকে খুঁজতে বের হই। সে সময় কয়েকজন জানায়, তামিম জেলখানা মোড়ের দিকে গেছে। তখনই বুকের ভেতরে চিপ দিয়ে উঠে। কারণ সেখানে আন্দোলন চলছিল। ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রায় দশ মিনিটের মতো ছেলেকে খুঁজেছি। কিন্তু পাইনি।’

‘পরে এসপি অফিসের দিকে যখন যাই তখন দেখি, একটি ছেলে স্ট্রেচারে শুয়ে আছে। প্রথমে বুঝতে পারিনি সেটা তামিম। একটু কাছে গিয়ে দেখি আমার ছেলের মুখ। তখন মনে হচ্ছিল, পুরো আকাশ আমার মাথায় ভেঙে পড়েছে। পাগলের মতো ছুটে যাই ছেলের দিকে। কিন্তু, কয়েকজন শিক্ষার্থী আমাকে ধরে মসজিদের ভেতরে নিয়ে যায়। সে সময় গোলাগুলি শুরু হয়। আমার মৃত ছেলের শরীরে অনবরত গুলি লাগতে থাকে।’ – যোগ করেন তিনি।

রফিকুল ইসলাম আরও বলেন, ‘গোলাগুলি থামার পর ছেলের মরদেহ বাসায় নিয়ে আসি। কখনো কল্পনাও করিনি, আমার সুস্থ সবল ছেলেকে এই অবস্থায় বাসায় নিয়ে আসতে হবে।’

নরসিংদী জেলা হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক মিজানুর রহমান বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা তামিমকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে আসে। তারপরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়। মরদেহ ময়নাতদন্ত করার জন্য রাখতে চেয়েছিলাম কিন্তু শিক্ষার্থীরা তা করতে দেয়নি। মারা গেছে শোনার পরই হাসপাতালে ভাঙচুর চালায়।’

আইএনবি/বিভূঁইয়া