আইএনবি ডেস্ক: জাতীয় পরিচয় (এনআইডি) নিবন্ধন অনুবিভাগের সার্ভার থেকে নাগরিকের পরিচয় যাচাইয়ের ফি বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এতে ব্যাংকসহ অন্যান্য সেবাগ্রহীতার এই খাতে ব্যয় বাড়বে।
আর এতে সরকারের রাজস্ব আদায়ে ভূমিকা বাড়বে ইসির।
ইসি সূত্রগুলো জানিয়েছে, ইসির সার্ভার থেকে সেবাগ্রহীতার সংখ্যা ১৬৪টি প্রতিষ্ঠান। এরমধ্যে রয়েছে- ৪৬টি সরকারি প্রতিষ্ঠান, ৬ মোবাইল কোম্পানি, ৬৩টি বাণিজ্যিক ব্যাংক, ২৮টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান, ৫টি বিমা প্রতিষ্ঠান, ৮টি মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল কোম্পানি এবং অন্যান্য ৪টি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি সার্ভার ব্যবহার করে থাকে ব্যাংক ও মোবাইল অপারেটরগুলো। অর্থাৎ এই দুই ধরনের প্রতিষ্ঠান থেকেই অধিকাংশ রাজস্ব আদায় হয়।
বর্তমানে প্রতি এনআইডি যাচাই করতে সংশ্লিষ্ট সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে এক টাকা এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও ব্যাংক-আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে দুই টাকা করে ফি দিতে হয়। নতুন সিদ্ধান্তটি কার্যকর হলে এনআইডি প্রতি ফি দিতে হবে পাঁচ টাকা। কর্মকর্তারা বলছেন, সার্ভার মেইনটেনেন্সসহ সব ব্যয়ই আগের চেয়ে বেড়েছে। এছাড়া এটা খুব বেশি বৃদ্ধি নয়।
এদিকে শুধু ফি বাড়ানোই নয়, বিলিং সিস্টেমেও আনা হচ্ছে পরিবর্তন। কোন প্রতিষ্ঠান কতবার এনআইডি যাচাই করল তার হিসাব বর্তমানে করা হয় ম্যানুয়ারি। কিন্তু অচিরেই এজন্য সফটওয়্যারের মাধ্যমে হিসাব রাখা হবে এবং স্বয়ংক্রিয়ভাবে বিল তৈরি হয়ে যাবে।
জানা গেছে, রাজস্ব বোর্ড, অর্থ মন্ত্রণালয়, সমাজসেবা, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ইত্যাদি সরকারি প্রতিষ্ঠান ইসির সার্ভার থেকে অনলাইনে ব্যক্তির এনআইডি নম্বর, জন্ম তারিখ প্রেরণ করলে ডাটাবেজ থেকে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির নাম, এনআইডি নম্বর, জন্ম তারিখ, বাবার নাম, মাতার নাম, স্বামী/স্ত্রীর নাম, ছবি যাচাই করতে পারে।
অনলাইনে আইডি নম্বর, জন্ম তারিখ, আঙ্গুলের ছাপ পাঠানো হলে ডাটাবেজ হতে শুধুমাত্র সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির তথ্য যাচাই করে হ্যাঁ/না আকারে জানানো হয় মোবাইল অপারেটরগুলোকে।
পরিসংখ্যান ব্যুরোকে অনলাইনে নাম, আইডি নম্বর, জন্ম তারিখ, বাবার নাম, মায়ের নাম প্রেরণ করা সাপেক্ষে ডাটাবেজ হতে শুধুমাত্র যাচাই করে হ্যাঁ/না আকারে জানানো হয়।
বেওয়ারিশ লাশ, জঙ্গি, অপরাধীদের আঙ্গুলের ছাপ অনলাইনে প্রেরণ করা হলে ডাটাবেজে রক্ষিত সব বায়োমেট্রিক তথ্যের সঙ্গে আঙ্গুলের ছাপ যাচাই করে র্যাব, স্পেশাল ব্রাঞ্চ, পিবিআই ইত্যাদি সংস্থাগুলোকে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির পরিচিতি শনাক্ত করা দেওয়া হয়।
এছাড়া অনলাইনে আইডি নম্বর, জন্ম তারিখ পাঠানো হলে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ডাটাবেজ হতে শুধুমাত্র সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির নাম, আইডি নম্বর, জন্ম তারিখ, বাবার নাম, মায়ের নাম, স্বামী/স্ত্রীর নাম ও ছবি ইত্যাদি ইমেজ আকারে দেখানো হয়।
এ বিষয়ে ইসির আইডিইএ প্রকল্পের পরিচালক আবুল কাশেম মো. ফজলুল কাদের জানিয়েছেন, প্রতিবার তথ্য যাচাইয়ের ক্ষেত্রে সরকারী প্রতিষ্ঠানের জন্য এক টাকা এবং বেসরকারি এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহের জন্য দুই টাকা হারে জাতীয় পরিচয়পত্র যাচাইকরণ চার্জ ধার্য করা আছে। বেসরকারি এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহের জন্য প্রতিবার তথ্য যাচাই ফি দুই টাকার পরিবর্তে ৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে, যা উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ কর্তৃক অনুমোদিত হয়েছে এবং গেজেট প্রকাশের পর কার্যকর হবে। পার্টনার প্রতিষ্ঠানসমূহ নাগরিকের জাতীয় পরিচিতি নম্বর এবং জন্ম তারিখ কমিশনের সার্ভারে পাঠিয়ে প্রয়োজনীয় তথ্য যাচাই করে থাকে। প্রতিষ্ঠানের ধরন অনুযায়ী জাতীয় পরিচিতি নম্বর এবং জন্ম তারিখ এর পাশাপাশি আঙ্গুলের ছাপ পাঠালেও নাগরিকের প্রয়োজনীয় তথ্য যাচাই করার সুযোগ রয়েছে।
নির্বাচন কমিশন ২০১২ সালে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এবং বাংলাদেশ পাসপোর্ট অধিদপ্তরের সঙ্গে চুক্তি সম্পাদনের মাধ্যমে এনআইডি ডাটাবেজ ব্যবহার করে পরিচিতি যাচাই সেবার প্রচলন করে। ধীরে ধীরে এখন সব প্রতিষ্ঠানই ইসির সঙ্গে তথ্য শেয়ারের এই চুক্তিতে আসছে। এতে একদিকে যেমন সরকারের রাজস্ব বাড়ছে, অন্যদিকে কমে যাচ্ছে জাল-জালিয়াতি। বাংলানিউজ২৪
আইএনবি/বিভূঁইয়া